ফাইল চিত্র।
কয়েকদিন পরেই বাড়িতে জোড়া বিয়ের আসর। কিন্তু গৃহকর্তা কী যোগ দিতে পারবেন সেখানে? সংশয়ে রয়েছে পরিবার।
কৌতূহল বাড়ছে জঙ্গলমহলেও। কারণ গৃহকর্তার নাম ছত্রধর মাহাতো। তৃণমূলের জেলবন্দি নেতা তথা জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন মুখপাত্র ছত্রধরের বড় ছেলে ধৃতিপ্রসাদ ও ছোট ছেলে দেবীপ্রসাদের বিয়ে আগামী মাসের গোড়ায়। এত আনন্দ আয়োজন সবই যে বৃথা ছত্রধর ছাড়া, একথা মানছেন তাঁর স্ত্রী নিয়তি মাহাতো। স্বামীর প্যারোলে মুক্তির জন্য আদালতে শীঘ্রই আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন নিয়তি। আইনজীবীদের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।
২০০৮-২০০৯ পর্বে জঙ্গলমহল তখন মাওবাদী সন্ত্রাসে উত্তাল। সেই সময়ে পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনের মুখ ছিলেন ছত্রধর। ২০০৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর লালগড়ের বীরকাঁড় গ্রাম থেকে প্রথমবার গ্রেফতার হন তিনি। দশ বছরেরও বেশি জেলবন্দি থাকার পরে হাইকোর্ট সাজার মেয়াদ কমানোয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেলমুক্ত হয়ে ছত্রধর তৃণমূলে যোগ দেন। শাসকদলের রাজ্য সম্পাদকের পদ দেওয়া হয় তাঁকে। তবে গত বছর ২৭ মার্চ জঙ্গলমহলে বিধানসভা ভোট মিটতেই গভীর রাতে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে হানা দিয়ে ছত্রধরকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। ২০০৯ সালের দু’টি পুরনো মামলায় ইউএপি আইনের ধারা যুক্ত করে ছত্রধরকে অভিযুক্ত করা হয়। ছত্রধর এখন প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি।
ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তি এখন জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের সদস্য পদেও রয়েছেন তিনি। ছত্রধর-নিয়তির বড় ছেলে ধৃতিপ্রসাদ একটি সমবায় ব্যাঙ্কের মেদিনীপুর শাখার কর্মী। ছোটছেলে দেবীপ্রসাদ ভূমি দফতরে অস্থায়ী কাজ করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, লালগড়ের পূর্ণাপানি ও করগানালা গ্রামের দুই তরুণীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে ধৃতিপ্রসাদ ও দেবীপ্রসাদের। ছেলেদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে জেলবন্দি স্বামীর সম্মতি নিয়েই বিয়ের দিন ঠিক করেছেন নিয়তি। কার্ডও ছাপানো হয়ে গিয়েছে। নিয়তি জানান, গত বছর বিধানসভা ভোটের আগেই দুই ছেলের পছন্দে সিলমোহর দেন ছত্রধর। ঠিক ছিল ভোটের পরে দুই ছেলের বিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি গ্রেফতার হওয়ায় বিয়ে স্থগিত হয়ে যায়। নিয়তি জানাচ্ছেন, আগামী ৩ জুলাই ধৃতিপ্রসাদ ও ৫ জুলাই দেবীপ্রসাদের বিয়ে। লালগড়ের আমলিয়া গ্রামের বাড়িতে দুই ছেলের বৌভাতের প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান হবে ৬ জুলাই। নিয়তি বলছেন, ‘‘আমন্ত্রিতের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। উনি পাশে থাকলে তো এত সমস্যা হত না। একা সব সামলাতে হচ্ছে। ছেলেরা বিশাল তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। খরচের দিকটাও তো ভাবতে হচ্ছে।’’
ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ জানান, প্রথম দফায় জেলবন্দি থাকাকালীন ভাই শশধর, বাবা আশুতোষ ও শাশুড়ির মৃত্যুতে তিন বার প্যারোলে ছাড়া পেয়ে তাঁদের পারলৌকিক কাজে যোগ দিয়েছিলেন ছত্রধর। এবার বাড়িতে শুভ অনুষ্ঠান। তাই প্যারোলের জন্য এনআইএ-র বিশেষ আদালতে আবেদন করা হবে। ছত্রধরের বৃদ্ধা মা বেদনবালা বলছেন, ‘‘ছেলেদের বিয়েতে ছত্রধর থাকবে সেই আশাতেই রয়েছি।’’ দুই নাতির বিয়ের পৃথক দু’টি কার্ডে আমন্ত্রণকারী হিসেবে বেদনবালার নাম রয়েছে।