প্রতীকী ছবি।
জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ‘মুখ’ তিনি। সেই ছত্রধর মাহাতো এ বার বিজেপিকে জব্দ করতে আসরে নামছেন।
সংখ্যালঘু এক যুবক খুনের ঘটনাকে হাতিয়ার করে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধরের পরিকল্পনায় ওই খুনকে সামনে রেখে জঙ্গলমহলে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শানানোর আয়োজন হচ্ছে।
রাধানগর গ্রাম থেকে ঝাড়গ্রাম শহর পর্যন্ত ছত্রধরের নেতৃত্বে বিশাল মোমবাতি মিছিলের পরিকল্পনা হয়েছে। থাকবেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ও দলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা-কর্মীরাও। মিছিলের দিন ১৬ ডিসেম্বর ঠিক করা হলেও তা চূড়ান্ত নয়। কারণ, ১৫ অথবা ১৬ ডিসেম্বর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামে দলীয় সভা করতে পারেন। জেলা সংখ্যালঘু সেলের নেতা শেখ আব্দুল কাদির বুলেট বলছেন, ‘‘রাজ্য সম্পাদকের নেতৃত্বে কয়েক দিনের মধ্যেই দেখার মতো মিছিল হবে। ওই দিন জঙ্গলমহল থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দেবেন ছত্রধরদা।’’
গত ৮ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম শহরে ক্রিকেট খেলা দেখতে এসে খুন হন রাধানগর গ্রামের যুবক শেখ তকবির আলি। শহরেরই জমি মাফিয়া, পেশায় পশ্চিম মেদিনীপুরের এনভিএফ কর্মী বিশ্বজিৎ প্রধান ওই খুনে মূল অভিযুক্ত। বিশ্বজিৎ-সহ দু’জন গ্রেফতারও হয়েছেন। পুলিশের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদেই খুন হন বিশ্বজিতের পুরনো সঙ্গী তকবির। তবে ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। বিশ্বজিৎ এবং তাঁর পরিবার তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত হলেও ছত্রধরের দাবি, বিশ্বজিৎ গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ। গত ১০ ডিসেম্বর নিহত তকবিরের বাড়ি গিয়ে ছত্রধর অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূল কর্মী তকবিরকে খুনের পিছনে বিজেপি-র হাত রয়েছে। গত শনিবার জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দুর্গেশ মল্লদেব ও তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতারাও তকবিরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে একই দাবি করেন। এ বার সেই তকবির হত্যাকেই বিজেপির বিরুদ্ধে হাতিয়ার করে প্রচারে নামছেন ছত্রধররা।
জেলায় এসে বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ বারবারই ছত্রধরকে নিশানা করছেন। সম্প্রতি ভারতী বেলিয়াবেড়ার জনসভায় তৃণমূলকে উৎখাত করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। পাল্টা কৌশল হিসেবে ছত্রধরও তকবিরের হত্যাকাণ্ডকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে যুতসই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ছত্রধর বলছেন, ‘‘পুলিশ পুলিশের মতো তদন্ত করছে। কিন্তু আমাদের কাছে খবর, বিজেপি-র ইন্ধনেই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী তকবিরকে খুন করা হয়েছে। জঙ্গলমহলে শান্তিরক্ষার ডাক দিয়ে পথে নামছি। তকবিরের গ্রাম থেকে ঝাড়গ্রাম শহর পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষের প্রতিবাদ মিছিল হবে।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী পাল্টা বলছেন, ‘‘জমিজমা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ওই খুন হয়েছে। আর বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে অশান্তি-সন্ত্রাসের জন্য ছত্রধরকে দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল। তবে মিথ্যাচারের জবাব মানুষই দেবেন।’’