স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ। প্রতীকী চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিতে বারবারই শিরোনামে আসছে শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। নতুন করে এ ক্ষেত্রে নাম জড়িয়েছে জেলার এক স্কুল শিক্ষকের। কলকাতা হাই কোর্টে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী এ নিয়ে শুক্রবার অভিযোগ জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত দীপক জানা বর্তমানে কাঁথির বিচুনিয়া জগন্নাথ বিদ্যামন্দিরের ইংরেজির শিক্ষক। ২০১৮ সাল থেকে রাজ্য সরকারের নানা দফতরে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৫ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। চিরঞ্জীবকুমার দাস নামে কাঁথি শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘২০১৯ সালে খাদ্য সরবরাহ দফতরে চাকরি পাইয়ে দেবে বলে ৪ লাখ টাকা বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর কিছুই হয়নি।টাকা ফেরত চাইতে গেলে শাসকদলের নাম করে হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছি।’’
একা চিরঞ্জীব নন, অনেকের থেকেই চাকরির নামে দীপক টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক পদ ছাড়াও যে কোনও সরকারি দফতরের চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেও সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে হাই কোর্টে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। আগামী সপ্তাহে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দিন স্কুলেই ছিলেন ওই অভিযুক্ত শিক্ষক। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নই ওঠে না। কোনও প্রমাণ নেই যে আমি টাকা নিয়েছি। যেহেতু রাজনীতি করি, তাই মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। তদন্তে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ দীপক স্কুলে নিয়মিত ক্লাসও নেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে আমি এই স্কুলে এসেছি। দীপক সম্পর্কে কোনও অভিযোগ পাইনি। তিনি স্কুলে নিয়মিত আসেন এবং পড়ান।’’ এলাকায় দীপক নিজেকে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের নেতা বলে পরিচয় দেন, জানালেন স্থানীয়রা। যদিও পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কাঁথি মহকুমা সভাপতি সত্যজিৎ কর বলছেন, ‘‘উনিসংগঠনের সদস্য হতে পারেন। তবে পদাধিকারী নন।’’
আদালতের নির্দেশে সব নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে গিয়েছে। আদালতের রায়ে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, গ্রুপ সি, ডি-সহ একাধিত ক্ষেত্রে কর্মরত অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি গিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, বিধায়ক, শাসক দলের নেতা থেকে আধিকারিক, অনেকেই। বৃহস্পতিবার তো জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার সরাসরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম করেছেন নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বলে। তা নিয়েও জেলা জুড়ে চর্চা চলছে। অভিযোগ, ২০১১-১২ সালে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বিস্তর অনিয়ম, স্বজনপোষণ হয়েছে। তৎকালীন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেনের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী পিছু ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা তৎকালীন সাংসদ শুভেন্দুর কাছে যেত বলে সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও মামুদের দাবি, ‘‘সম্পূর্ণ কল্পনা প্রসূত অভিযোগ। এর কোনও সারবত্তা নেই।’’