Bangla Awas Yojana

আবাসের সমীক্ষা নিয়ে গোপনীয়তা 

আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তাদের টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার টাকা ছাড়ার আগে সতর্ক সরকার।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

গড়বেতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১০
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কয়েকবছর আগে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির অর্থ বণ্টনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল গড়বেতা ১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতে। সেই ঘটনায় পঞ্চায়েতের স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৪ জন কর্মীর বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। গ্রেফতার হয়েছিল কয়েকজন। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। আবাস কেলেঙ্কারির এই ঘটনা সামনে আসতে শোরগোল পড়েছিল জেলায়। তার পর থেকে আবাস যোজনার কাজ নিয়ে সতর্ক প্রশাসন। এরই মধ্যে আরও একবার আবাস যোজনার কাজ নিয়ে তৎপরতা বাড়ছে ব্লকে - পঞ্চায়েতে। ফের যাতে কেলেঙ্কারির মুখে পড়তে না হয় সেজন্য এ বার আগেভাগেই সতর্ক গড়বেতা ১-সহ অন্যান্য
ব্লক প্রশাসন।

Advertisement

আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তাদের টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার টাকা ছাড়ার আগে সতর্ক সরকার। আবাস নিয়ে দুর্নীতি বা কোন অভিযোগ যাতে না ওঠে সে জন্য শেষ পর্বে আরও একবার আবাস নিয়ে সমীক্ষা করছে সরকার। রাজ্যের অন্য জেলাতে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় গোলমাল হচ্ছে। মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনী বিধিতে আটকে আছে এই জেলায় আবাস সমীক্ষার কাজ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট মিটলেই শুরু হবে সেই কাজ। সেই সমীক্ষার কাজ নিয়ে অতিরিক্ত সাবধানী জেলা প্রশাসন। গোপনীয়তা বজায় রাখছে ব্লক ও পঞ্চায়েত প্রশাসন। মুখে কুলুপ শাসকদল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।

গরিব মানুষের জন্য আবাস যোজনার বাড়ির অর্থ বরাদ্দে কেন্দ্র সরকার বাংলাকে বঞ্চনা করছে বলে অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল সুর চড়ায় মাঝে মধ্যেই। কেন্দ্রের সেই বঞ্চনার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলায় গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির জন্য রাজ্য সরকারই আবাস যোজনায় তালিকাভুক্তদের জন্য টাকা দেবে। ডিসেম্বর থেকেই না কি সেই টাকা উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকার কথা। তার আগে শেষ মুহূর্তে হচ্ছে আর এক দফা সমীক্ষা। জানা গিয়েছে, প্রতি পঞ্চায়েতে আবাস নিয়ে এই সমীক্ষার কাজ করবেন ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিরাই। ব্লকের 'লাইন ডিপার্টমেন্ট' এর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ও অফিসাররা এই সমীক্ষা করবেন। সে জন্য ছোট ছোট দলে ভাগ করে অনেক ব্লক তালিকা তৈরিও করে ফেলেছে। তবে সেই সমীক্ষক দলে কে বা কারা আছেন, তাঁরা কবে কোন পঞ্চায়েতের কোথায় এই সমীক্ষার কাজ করবেন, তা এখনও অনেক ব্লকেই চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা।

Advertisement

গড়বেতার তিনটি ব্লকে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। একটি ব্লকের এক আধিকারিক বলেন, "আবাসের সমীক্ষা করতে যখনই নির্দেশ আসবে, তখনই যাতে কাজ শুরু করা যায়, সে জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।" কারা থাকছেন এই সমীক্ষক দলে? ওই আধিকারিক বলেন, "সেটা এখনই বলা ঠিক হবে না।" গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষ বলেন, "আবাসের সমীক্ষা হবে, এটুকুই বলা হয়েছে প্রতি পঞ্চায়েতকে, এর বেশি কিছু বলা হচ্ছে না।" কেন? তৃণমূলের ওই কর্মাধ্যক্ষ বলেন, "উপর থেকেই বলতে বারণ করা আছে। তা ছাড়া আমাদের ব্লকে কয়েকবছর আগে আবাস যোজনার অর্থ বণ্টন নিয়ে কম কেলেঙ্কারি হয়েছিল! তাই বাড়তি সাবধানতা।" গড়বেতা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে অবশ্য বলছেন, "সমীক্ষার কাজ নিঁখুত ভাবেই করা হবে। তার জন্য সতর্কতা অবলম্বন তো করা হবেই। তবে গোপন করার মতো কিছু নেই।"

এ নিয়ে শাসককে বিঁধতেও ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপি ও সিপিএম উভয় দলের নেতারা বলছেন, নানা দিক দিয়ে চাপে পড়ে কৌশল বদল করেছে শাসকদল। চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা বিজেপির ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য গৌতম কৌড়ি বলেন, "আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির জন্যই তো কেন্দ্র থেকে টাকা আসছে না। সেই দুর্নীতি আবার হবে। সে জন্যই গোপনীয়তা বজায় রেখে সমীক্ষা করার কৌশল নিয়েছে শাসকদল।" সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দিবাকর ভুঁইয়া বলেন, "আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে আর একটা দুর্নীতির প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে।" গড়বেতার তৃণমূল বিধায়ক উত্তরা সিংহ বলেন, "যাঁরা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে আছে সেই বাম-রাম দুর্নীতির কথা বলছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বচ্ছতার সাথে কাজ করেন বলেই, আবাস নিয়ে আরও একবার সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা তৃণমূল সরকার বলেই সম্ভব। মানুষ সব বোঝেন। উপনির্বাচনেই তার জবাব পেয়ে যাবে বাম-রাম।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement