খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের বাইরে জমছে জল। নিজস্ব চিত্র।
নদী তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ?
মহাদেবের জটা হইতে।
‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ লিখেছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। কিন্তু প্রশ্ন যদি হয় রেলশহরের জমা জলের উৎস কী, উত্তর জলের মতো সহজ তো নয়ই বরং মহাকাশ বিজ্ঞানের মতোই কঠিন। রেল, পুরসভা, পূর্ত দফতর। নানা পক্ষের নানা মত। পুরসভার দাবি, রেলের জলে ভাসছে শহর। জল পরিস্থিতি এতটাই কঠিন করে তুলেছে যে হাসপাতালের জমা জল সরাতে তৎপর হয়েছে পূর্ত দফতর। রেল জানিয়েছে, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা খতিয়ে দেখবে তারা।
খড়্গপুর শহরে বৃষ্টির জমা জল ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা বুধবারও জলমগ্ন। রেল এবং পুরসভা এলাকার বিভিন্ন অংশে জমে রয়েছে জল। টানা চারদিন ধরে বাড়ির বাইরে বেরোতেই পারছেন না নাগরিকরা। খড়্গপুরে রেলের গোলবাজারের আনাজ বাজার থেকে ক্লথ মার্কেটে জমা জলে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ীরা। মহকুমা হাসপাতাল থেকে পুরসভা হয়ে কৌশল্যা পর্যন্ত শহরের ঝাপেটাপুরের মূল সড়কপথে জল ঠেলে চলতে হচ্ছে শহরবাসীকে। সবচেয়ে দুর্বিসহ পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে হাসপাতালে। মূল গেটের বাইরে ও হাসপাতাল চত্বর জুড়ে জমে রয়েছে জল। নোংরা জল জামা-কাপড়, জুতো ভিজিয়ে বহির্বিভাগ থেকে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে যাতায়াত করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের পরিজনদের। হাসপাতালের বাইরে নর্দমার উপরে থাকা জবরদখলে নিকাশির পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে শহরবাসী।
যদিও এ সবের দায় নিতে নারাজ পুরসভা। তাদের দাবি, রেলের জলে ভাসছে শহর। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “ঝাপেটাপুর রোডে পুরসভার সামনে যে জল জমছে তা তো রেলের জল। হাসপাতালের সামনে থেকে এই ঝাপেটাপুর রোড তো পূর্ত দফতরের। জল বার করার ব্যবস্থা পূর্ত দফতরকে করতে হবে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘পূর্ত দফতরকে বলেছি হাসপাতালের সামনে যে জবরদখল রয়েছে তা সরিয়ে জল বেরোনোর ব্যবস্থা করতে হবে।” পূর্ত দফতরের জায়গা। সেখানে জমছে রেলের জল। তা হলে দায় কার! খড়্গপুর রেল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক অলোক কৃষ্ণ বলেন, “কোন জল কোথায় যাচ্ছে সেটা দেখতে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানব।”
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্ষার আগেই শহরের বারবেটিয়া, সোনামুখী, পাঁচবেড়িয়া, দেবলপুর, বুলবুলচটির কাছে বড় নালা পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে। শহর জুড়ে ৫টি মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে নালা পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও শহরের ওয়ার্ডের গলিপথে থাকা নর্দমাও পরিষ্কার করতে পুর প্রতিনিধিদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও শহরবাসীর দাবি, শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখনও জমে রয়েছে জল। শহরের ইন্দার ১নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপল্লির বাসিন্দা অপলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার বাড়ির সামনে ১২বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে। তবে এ বার পাঁচদিন ধরে বাড়ির বাইরে বেরোতেই পারছি না। হাঁটু পর্যন্ত জল জমে রয়েছে রাস্তায়।”
ঝাপেটাপুর রোডে হাসপাতালের বাইরে রয়েছে জবরদখল। পূর্ত দফতরের সড়কের ধারে নিকাশি নালার একাংশ দখল করে রয়েছে দোকানঘর। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর একদিন পুরপ্রধান পরিদর্শন করলেও জবরদখল সরেনি। জবরদখল সরানোয় উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি পূর্ত দফতরকেও। দিন কেটে যাচ্ছিল পারস্পরিক চাপানউতোরে। পরিস্থিতি জটিল করেছে জমা জল। জবরদখলে রুদ্ধ নিকাশি নালার জেরে হাসপাতাল এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় পূর্ত দফতরের কাঁধেই দায় চাপিয়েছে পুরসভা।
বুধবার অগত্যা পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এ দিন হাসপাতাল এলাকা পরিদর্শন করেন। তবে জবরদখল সরিয়ে নিকাশি নালা পরিষ্কার ছাড়া উপায় নেই বলেও মনে করছে পূর্ত দফতর। পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শিবু বিশ্বাস বলেন, “আমি হাসপাতালের এই জমা জলের পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। কিন্তু যে নর্দমার উপরে জবরদখল এত বছর রয়েছে তা আমি তো একদিনে সরাতে পারব না। প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আপাতত কোনও কাঁচা নালা কেটে জল বার করা যায় কি না সেটাই দেখছি।”