ফাইল চিত্র।
কেলেঘাই-বাগুই এবং কপালেশ্বরী নদীর সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত শুরু হয়ে গেল। কেলেঘাই সংস্কারের জন্য এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেয়নি বলে অভিযোগ করলেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।
অন্য দিকে, কাঁথি লোকসভার সাংসদ শিশির অধিকারী অভিযোগ করেছেন, বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলি তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হলেও পরিস্থিতি মোকাবিলায়
কোনও প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁকে ডাকা হচ্ছে না।
গত সপ্তাহে কেলেঘাই নদী এবং বাগুই খালের বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে পটাশপুর, ভগবানপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাঁধ ভাঙা এবং বন্যার কারণ হিসাবে একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেছেন স্থানীয়েরা। নদী-খালের সংস্কার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কথা বলা হয়েছিল সেচমন্ত্রীর সঙ্গে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি মূল নদী সংস্কারের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ শতাংশ হারে খরচ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ঘোষণা মাফিক কেলেঘাই সংস্কারের জন্য কোনও অর্থ দেয়নি কেন্দ্র। এককভাবে রাজ্য সরকারই কেলেঘাই সংস্কারের কাজ করছে।’’
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কেলেঘাই নদী সংস্কারের কাজ শুরু করে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে কেলেঘাই সংস্কার কাজের সূচনা হয়েছিল। কেলেঘাই, বাগুই এবং চণ্ডীয়া নদী সংস্কারের জন্য ৬৫২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে ঘোষণা করা হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর এবং পটাশপুরের প্রান্তে নদী সংস্কারের কাজ কিছুটা হওয়ার পরই বন্ধ হয়ে যায়।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার চুক্তি অনুযায়ী ৩২৫ কোটি টাকার কাজ করে ফেলেছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তার মধ্যেও ১০০ কোটির বেশি টাকা রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে খরচ করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র আর্থিক সাহায্য করেনি। সম্প্রতি কেলেঘাই সংস্কারের দাবিতে দিল্লিতে গিয়েছিল রাজ্য সরকারের একটি প্রতিনিধি দল। এ ব্যাপারে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাওনা
টাকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
সেচ মন্ত্রীর দাবি মানতে রাজি নয় কেন্দ্রের শাসক দল। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রঅর্থ বরাদ্দ করেছে। সেই অর্থ খরচ করে সঠিকভাবে কেলেঘাই সংস্কার করতে পারেনি রাজ্য।’’
এ দিকে, কেলেঘাই সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরজার মধ্যেই পটাশপুর এবং ভগবানপুরের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসনকে। দফায় দফায় জেলা প্রশাসন বৈঠক করছে। পটাশপুর এবং ভগবানপুর বিধানসভা এলাকায় কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। আপাতত কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর সাংসদ পদ খারিজের দাবি লোকসভার স্পিকারের কাছে জানিয়েছে তৃণমূল। এমতাবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনিক মিটিং এর তাকে ডাকা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে সম্প্রতি একাধিক চিঠি দিয়েছি। রাজ্য সরকার আমার চিঠিতে কোনও কর্ণপাত করেনি। এমনকি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসনিক বৈঠকগুলিতেও সাংসদ হিসাবে আমাকে ডাকা হচ্ছে না।’’
পটাশপুর এবং চণ্ডীপুরে রাজ্যের শাসকদলের বিধায়ক রয়েছেন। তাঁরা কোমর বেঁধে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্র এবার বিজেপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সেখানকার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতিকেও প্রশাসনিক বৈঠকে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজিকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন," এলাকার বিধায়ক এবং সাংসদ দুজনকে দেখা যায়নি। প্রশাসনিক বৈঠকে আমরাও নিজেরাই গিয়েছিলাম। দুর্গতদের সেবা করার জন্য জন প্রতিনিধিদের কেউ ডেকে নিয়ে যান না।’’