ফলতায় ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলে গোষ্ঠীকোন্দল আছে। মেনে নিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, দল বড় হলে কোন্দল স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা সকলকে মেনে চলতে হবে। অভিষেকের কথায়, ‘‘দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। আর কেউ নিজেকে কেউকেটা ভাবলে দলও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না।’’
বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরে উপস্থিত হন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। সেখানে মালদহ-কাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। গত ২ জানুয়ারি মালদহের ইংরেজবাজারে তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুন হন। তাতে মূল চক্রী হিসাবে উঠে আসে মালদহ শহর তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির নাম। পুলিশ নরেন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করার অনতিবিলম্বে তৃণমূল তাঁকে বহিষ্কার করে। মঙ্গলবার সেই মালদহেরই কালিয়াচকে আরও একটি রাজনৈতিক গন্ডগোল হয়েছে। খুন হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী। পর পর এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তেমনই প্রকাশ্যে আসছে শাসকদলের কোন্দল। অভিষেকের দাবি, সরকার এবং প্রশাসন যে যার মতো ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাউকে ফাঁসাতে হবে, এ সব ভেবে তদন্ত হয় না বাংলায়। তদন্ত তদন্তের মতো করে হয়। সেখানে যে কারও যোজসাজশ থাকুক না কেন তা সামনে আসে।’’
এর পরই দুলাল খুনের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীও। মালদহের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলেরই এক নেতা।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, পূর্বতন বাম আমলে এমন একটি উদাহরণ নেই। কিন্তু এ রাজ্যের বর্তমান সরকার দোষীদের আড়াল করে না। সে তিনি যে-ই হোন না কেন। তাঁর কথায়, ‘‘কখনও দেখাতে পারবেন, উত্তরপ্রদেশে কোনও বিজেপি নেতা অপরাধের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন? আমরা তদন্তের মতো তদন্ত করি। যদি কেউ কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকে, সে যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকুক, যে ধর্ম-বর্ণের হোক, এক জন দোষী দোষীই। অপরাধীর কোনও জাতি বা ধর্ম হয় না। আমরা ব্যবস্থা নেব। অপরাধীদের কেউ পার পাবে না।’’
মালদহের ঘটনা নিয়ে অভিষেক আরও বলেন, ‘‘পুলিশকে নিয়ে যা বলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। যে নির্দেশ দেওয়ার তিনি দিয়েছেন। কিন্তু দলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে যে কথা বলা হচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে বলি— একটি রাজনৈতিক দল যখন বড় হয়, তখন সেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক।’’ তৃণমূলের ‘সেনাপতি’র প্রশ্ন, ‘‘বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই? সিপিএম যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল, তখন গোষ্ঠীকোন্দল ছিল না?’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘একটা বাড়িতে ছ’জন থাকলে চার জনের ঝগড়া হয়। সেখানে একটি দল যেখানে লক্ষের উপর পদাধিকারী আছেন, সেখানে মতভেদ, মনোমালিন্য থাকতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক।’’
যদিও দলের এই ফাটল মেরামতে তৃণমূল সক্রিয় বলে জানান অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘যদি কেউ কোনও ভাবে দলকে দুর্বল করতে চান, তাঁর বিরুদ্ধে অতীতেও দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামী সময়েও এর কোনও ব্যতিক্রম হবে না। কোনও অপরাধের সঙ্গে যদি কেউ যুক্ত থাকেন, পুলিশ-প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কাউকেই রেয়াত করা হবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক জন বুথ স্তরের কর্মীকে যেমন শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবেও আমাকে সেই শৃঙ্খলা মানতে হবে। আর নিজেকে কেউকেটা ভাবলে দলে তাঁর জায়গা নেই।’’ অভিষেকের বার্তা, ‘‘দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেছেন। মানুষের কাজ করতে গিয়ে যদি কেউ নিজেকে কেউকেটা ভাবেন, তাঁদের জন্য তৃণমূলের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের সকলকে বিনয়ী হতে হবে, নম্র হতে হবে।’’ তাঁর আরও বার্তা, ‘‘যাঁরা ভাবছেন, মৌরসিপাট্টা করে দল চালাব, তাঁদের কপালে বিপদ আছে। এই একই ভুল সিপিএম করত। একই ভুল বিজেপি অন্য রাজ্যে করছে। আমাদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য রয়েছে। আমরা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ।’’