ধনতেরসের কেনাকাটা সোনার দোকানে। নান্নুরচকে। নিজস্ব চিত্র
করোনার কোপে গত বছর মুখ ছিল ভার। অর্থনৈতিক মন্দা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সামান্য বেড়েছে সোনার দরও। ফলে এ বছরও তেমন চাঙ্গা হয়নি সোনার বাজার। তবে মিশ্র সংস্কৃতির শহর খড়্গপুরে মঙ্গলবার ধনতেরসের সন্ধ্যায় ভিড় উপচে পড়ল সোনার বিপণিগুলিতে। হাসি ফুটল স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মুখে!
গত বছর করোনার প্রভাব পড়েছিল ধনতেরস উৎসবে। ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়নি। অথচ মিশ্র সংস্কৃতির এই শহরে ধনতেরসের দু’দিন আগে থেকেই শুরু হত সোনা-রুপোর কেনাকাটা। গত বছর থেকে করোনা পরিস্থিতিতে সেই জাঁক ছিল অধরা। এ বারও গত দু’দিন সোনার বিপণিগুলিতে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা কেনাকাটা করছিলেন। তবে এ দিন সকাল থেকেই পরিস্থিতি বদলায়। বেলা ১১টা থেকেই সোনার বিপণিতে মানুষের আনাগোনা চলছিল। দুপুর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকায় মুখে হাসি ফোটে বিক্রেতাদের।
হিন্দি ভাষায় ধন অর্থে সম্পদ ও তেরস অর্থে ত্রয়োদশীকে ইঙ্গিত করে। উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতিতে এই ধনতেরাসের দিন থেকেই ব্যবসায়ী পরিবারে ধনলক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয়। গৃহস্থ বাঙালি বাড়িতে দীপাবলির দিনেও হয় ধনলক্ষ্মীর পুজো। তবে রেলশহরে এখন উত্তর ভারতীয়, বাঙালি ছাড়াও তেলুগু, বিহারি, গুজরাতিদের এই ধনতেরাস উৎসবে মাতোয়ারা হতে দেখা যায়। ২০১৬ সালে নোটবন্দির পরে ২০২০ সাল থেকে করোনা প্রভাব ফেলেছে এই উৎসবে। তবে রীতি মেনে এ বার ফের কেনাকাটায় মজেছিল বাঙালি। খড়্গপুরের ইন্দার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি আদতে বাঁকুড়ার বাসিন্দা। সেখানে বহু আগেও ধনতেরসের দিনে সমৃদ্ধির কামনায় নতুন কিছু কেনার চল দেখেছি। তবে এটা ঠিক খড়্গপুরে একটু ধনতেরসের প্রভাব বেশি। তবে সোনার গয়না কেনার ইচ্ছে নেই। আমার স্বামী এ বার একটি সোনার কয়েন কিনেছে। আমি একটি রুপোর লক্ষ্মীমূর্তি কিনব বলে বাজারে এসেছি।”
করোনার আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বহু পরিবার। তবে এ দিনও তাদের অনেকের মধ্যেই কম ওজনের সোনা কেনার ঝোঁক দেখা গিয়েছে। যেমন শহরের খরিদার বাসিন্দা কিরণ শর্মা বলেন, “আমার স্বামীর পরিবহণের ব্যবসা। গত বছর থেকে ব্যবসা ভাল চলছে না। তবু নিয়মরক্ষায় সোনা, রুপো কিছু কিনব বলেই বাজারে এসেছি।” তবে ক্রেতার দেখা পেয়ে খুশি বাজারের একটি বড় সোনা বিপণির মালিক বিক্রম রাও। তিনি বললেন, “গত বছর একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম। এ বারও গত দু’দিন সেভাবে ক্রেতা আসেনি। এ দিন সকাল থেকেই দেখছি ক্রেতা আসছে। সন্ধ্যায় ভিড় হওয়ায় আনন্দ হচ্ছে। তবে ২০১৯ সালের মতো কেনাকাটা হচ্ছে না। মানুষ হাল্কা ওজনের গয়না, কয়েন খুঁজছে।” আবার আরেক সোনা বিপণির মালিক শৈলেশ শুক্ল বলেন, “২০১৯ সালের মতো না হলেও গত বছরের তুলনায় এ বার বাজার একটু ভাল। সন্ধ্যার পর থেকে মানুষ সোনা ও রুপোর জিনিস কিনছে। আমরা নানা উপহারও দিচ্ছি। রাতেই বুঝতে পারব কী হল!”