তার ছিঁড়ে সঙ্কট বিএসএনএলে

দুই সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। আর তার জেরে ভুগছেন টেলিফোন গ্রাহকেরা। যখন-তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা। রাস্তার নীচের কেবল ছিঁড়ে যাওয়াতেই এই বিপত্তি ঘটছে। বেশ কিছুদিন ধরেই মেদিনীপুর শহরে কয়েকটি রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। আর তাতেই রাস্তার নীচে টেলিফোন সংস্থার তার ছিঁড়ে যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১২
Share:

নির্বিচারে কাটা পড়ছে টেলিফোনের তার। —নিজস্ব চিত্র।

দুই সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। আর তার জেরে ভুগছেন টেলিফোন গ্রাহকেরা। যখন-তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা। রাস্তার নীচের কেবল ছিঁড়ে যাওয়াতেই এই বিপত্তি ঘটছে।

Advertisement

বেশ কিছুদিন ধরেই মেদিনীপুর শহরে কয়েকটি রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। আর তাতেই রাস্তার নীচে টেলিফোন সংস্থার তার ছিঁড়ে যাচ্ছে। বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কবে কোন রাস্তা খোঁড়ার কাজ হবে তা আগে থেকে আগে থেকে জানানো হলে বিএসএনএল-এর কর্মীরা উপস্থিত থাকতে পারেন। তাতে এমন বিপত্তির আশঙ্কা কমে।

অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ পূর্ত দফতর। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হয়তো বেশি দিন আগে থেকে জানানো সম্ভব হয় না। তবে জানানো হয়। সে কথা স্বীকার করেছেন বিএসএনএল-এর কর্তাও, “একেবারেই জানানো হয় না যে তা নয়! তবে যখন দফতরে চিঠি এসে পৌঁছয়, তখন বিপত্তি ঘটে গিয়েছে। অর্থাৎ, কেবল ছিঁড়ে যাওয়ার পরে জানতে পারি, কোথায় কোথায় মাটি খোঁড়ার কাজ চলছে।”

Advertisement

গত কয়েক দিনে মেদিনীপুর শহরের পুলিশ লাইন রোড, বাসস্ট্যান্ড রোড, অশোকনগর-সহ কিছু এলাকায় বেশ কিছু ল্যান্ডলাইন, ইন্টারনেট সংযোগ বিকল হয়ে গিয়েছে। সমস্যার কারণ সেই একই— রাস্তা খোঁড়ার ফলেই কেব্‌ল কেটে গিয়েছে। অশোকনগর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “আজকের দিনে টেলিফোন, ইন্টারনেট ছাড়া কোনও কাজ হয় না। খুবই অসুবিধায় রয়েছি।” এখন অবশ্য মোবাইল ফোনের চলই বেশি। যে সব পরিবারে ল্যান্ডলাইন রয়েছে তাঁরা বেশিরভাগই ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন। মেদিনীপুর শহরে এখনও বেসরকারি ডোঙ্গলের পরিবর্তে বিএসএনএল ব্রডব্যান্ড-এর ব্যবহার বেশি। তা ছাড়া ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস বা অন্যান্য সরকারি কাজে বিএসএনএল-নির্ভরতা তো রয়েছেই। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। মেদিনীপুর শহরে বিএলএনএলের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ল্যান্ডলাইন গ্রাহক রয়েছে।
গত কয়েক দিনে শতাধিক গ্রাহক সমস্যায় পড়েছেন বলে দফতরেরই এক সূত্রে খবর।

পূর্ত দফতর ও বিএসএনএল-এর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব যে রয়েছে তা স্পষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও।

মেদিনীপুরের এসডিওটি (বিএসএনএল) বিলাস ঘোষ বলেন, “আগে থেকে জানানো হলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তা তো হয় না। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সহজে গ্রাহক অসন্তোষ সামলানো যাচ্ছে না। কেব্‌ল জুড়তেও তো সময় লাগে।” অন্য এক কর্তার অভিযোগ, “সমন্বয় রেখে কাজের প্রস্তাব আগেও পূর্ত দফতরকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তবে এই প্রথম নয়। গত কয়েক মাসে এমন ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে।” তাঁর দাবি, রাস্তা খুঁড়তে গিয়ে মাটির নীচে সব তছনছ হয়ে গেলে সহজে তার জোড়া যায় না। বিএসএনএল-এর কর্মীও কম। ফলে, দ্রুত মেরামতির কাজ করে ওঠা সম্ভব হয় না।

পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করেছেন, “কোন রাস্তা খোঁড়া হবে তা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। যতটা সম্ভব আগাম জানানো হয়। মেদিনীপুর অনেক পুরনো শহর। বিএসএনএল কর্তৃপক্ষও সঠিক জানেন না কোথায় কোথায় কেব্‌ল রয়েছে।”

শহরের এই ভোগান্তির কথা পৌঁছেছে প্রশাসনের কাছেও। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক আফতাব আহমেদ বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছি। ওই দুই সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করব। নিশ্চয়ই সমাধান হয়ে যাবে।” পূর্ত দফতরের কাজে অসন্তুষ্ট পুলিশের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট না-জানিয়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করা পূর্ত দফতরের স্বভাব। ফলে মাঝেমধ্যে যানজট তৈরি হয়। সামাল দিতে হিমশিম খান ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরা। বিএসএনএল-এর সুরেই পুলিশের এক কর্তার বলেন, “কোন রাস্তা কবে খোঁড়া হবে তা আগে থেকে জানা থাকলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া যায়।” মেদিনীপুর শহরের এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, “আমরা যানজটের খবর পাচ্ছি। সেখানে দৌড়চ্ছি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পথচলতি মানুষের অসন্তোষের কথা শুনতে হচ্ছে।”

কেন পূর্ত দফতর সাবধান হচ্ছে না?

বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত টেলিফোন, ইন্টারনেট লাইন যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছে, সেখানে মাটি খোঁড়ার কাজ করার আগে কেন বিএসএনএল কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে না? পূর্ত দফতরের এক কর্তার সাফাই, “নতুন করে আর সমস্যা যাতে না হয় তা দেখা হচ্ছে!”

টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক দিনে একাধিক সরকারি অফিসও বিপত্তির মধ্যে পড়ে। তার মধ্যে রয়েছে পূর্ত দফতরের অফিসও। দফতরের এক কর্মীর কথায়, “সরকারি কাজকর্ম ব্রডব্যান্ড পরিষেবার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিকল্প হিসেবে যা ব্যবহার করা হয় তাতে প্রায় কাজই হতে চায় না। ইন্টারনেটে লিঙ্ক না-থাকলে কাজকর্ম ব্যাহত হবেই।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আশ্বাস, “আগামী দিনে সমন্বয় বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া হবে। তা হলে আর এমন ঘটনা বারবার ঘটবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement