প্রতীকী ছবি।
আগাম ঘোষণা করা হলেও বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিনন্দন যাত্রা কর্মসূচির পুলিশি অনুমতি ছিল না। তাই শনিবার নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া বাজারে যাওয়ার আগেই রেয়াপাড়ায় দিলীপের কনভয় আটকে দিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দিলীপের কনভয় নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া বাজারে পৌঁছতে পারেনি। রেয়াপাড়া বাজারে গাড়িতে দাঁড়িয়েই নিজের বক্তব্য রেখে কার্যত নন্দীগ্রামের কর্মসূচি শেষ করেন দিলীপ। রাজ্য সভাপতির কনভয় আটকে বিজেপির কর্মসূচি বানচাল করার অভিযোগের পাশাপাশি তা নিয়ে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসেব কষা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি, তৃণমূল উভয়েই।
রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্র ও এলাকায় সংখ্যালঘু জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের দিকে লক্ষ্য রেখেই নন্দীগ্রামে দিলীপের কর্মসূচি ঠেকাতে তৎপর ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। অন্যদিকে নন্দীগ্রাম বাজারের কাছে একটি ধর্মীয় সংগঠনের অনুষ্ঠান থাকায় বিজেপির কর্মসূচিতে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তাই দিলীপ সহ দলের রাজ্য নেতৃত্ব ওই দিন চণ্ডীপুর বাজার থেকে নন্দীগ্রামের দিকে যাওয়ার পথেই রেয়াপাড়া বাজারে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিজেপি জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েক-সহ দলীয় কর্মীরা এগোতে গেলে পুলিশ নবারুণকে হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। এর জেরে উত্তেজনা ছড়ালেও বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব কর্মী-সমর্থকদের ব্যারিকেড ভেঙে না এগোনোর পরামর্শ দিয়ে সংযত করেন। দিলীপ সেখানেই বক্তৃতা রেখে ফিরে যান।
তবে দিলীপের কনভয় আটকে কর্মসূচি ঠেকানো গেলেও রাজনৈতিকভাবে দলের লাভই হয়েছে বলে দাবি করলেন বিজেপির জেলা ও স্থানীয় নেতারা। নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা তথা জেলা সম্পাদক গৌরহরি মাইতি বলেন, ‘‘অভিনন্দন যাত্রায় যোগ দিতে নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৮ হাজার সমর্থক টেঙ্গুয়া বাজারে জমায়েত হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ জমায়েত হটাতে ও রেয়াপড়ায় রাজ্য সভাপতির গাড়ি আটকে সমর্থকদের উপর লাঠিচার্জ করেছে। ফলে নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাওয়ায় রাজনৈতিকভাবে আমাদের লাভ হয়েছে।’’
যদিও নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পালের পাল্টা দাবি, ‘‘দিলীপ ঘোষের কর্মসূচিতে যোগ দিতে টেঙ্গুয়া বাজারে ৫০০ জনও ছিল না। অনুমতি না থাকায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। আমাদের কেউ বাধা দেয়নি। দিলীপবাবু বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচির নামে যে ভাবে গোলমাল করেন তা রুখে দিয়েছে পুলিশ। এতে নন্দীগ্রামের মানুষের সমর্থন আমাদের পক্ষে আরও বাড়বে।’’ তবে তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতার কথায়, ‘‘বিজেপির কর্মসূচি আটকাতে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিকই। তবে এদিনই যেভাবে হলদিয়া ও নন্দীগ্রামের মধ্যে সমস্ত খেয়াঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তাতে বহু মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন। এতে মানুষের কাছে বিরূপ বার্তা গিয়েছে।’’
সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিকভাবে সব দলের কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। কিন্তু গত বছর কাঁথিতে অমিত শাহর জনসভা ঘিরে গোলামালের পরে শনিবার দিলীপ ঘোষের কনভয় আটকে তৃণমূল বিজেপিকে বাড়তে সহায়তা করছে। বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরের পরিপূরক হিসেবেই যে কাজ করছে এটা মানুষ বুঝতে পেরেছে।’’