ভেসে এসেছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত নৌকার ভাঙা অংশ। হাওড়ার শ্যামপুরের ডিহিমঙ্গলঘাটে তাই দেখতে ভিড় করেছেন বাসিন্দারা। সোমবার। ছবি তুলেছেন সুব্রত জানা।
মায়াচর গ্রামে আমার বাড়ি থেকে রূপনারায়ণ নদের বাঁধ কিছুটা দূরে। মায়াচরের খেয়াখাট থেকে নৌকায় রূপনারায়ণের উল্টোদিকে দনিপুর খেয়াঘাটে এসে আমরা মহিষাদল, তমলুক শহরে যাতায়াত করি।
তমলুক শহরে ডাক্তার দেখানোর জন্য সোমবার বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ বেরিয়েছিলাম। খেয়াঘাটে এসে দেখি তীর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নদের চরে অল্প জলে নৌকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভাটার সময় মায়াচরের খেয়াঘাটের দিক থেকে নদের বুকে এখন বিশাল চর জেগে ওঠে। তাই নৌকা খেয়াঘাটে ভিড়তে পারে না। ফলে যাত্রীদের চরে হেঁটে এসে নৌকায় উঠতে হয়। প্রায় ৯ টা নাগাদ আমি নৌকায় উঠে বসি। নৌকা তখন আড়াআড়ি ভাবে চরে আটকে রয়েছে। জোয়ার না আসা পর্যন্ত নৌকা ছাড়বে না। অথচ নৌকা ছাড়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ৭ টায়। কিন্তু চরে আটকে থাকায় যাত্রী তোলা হয়ে গেলেও ছাড়তে পারেনি। আমাকে নিয়ে প্রায় ৪০ জন ছিল। যাদের মধ্যে কয়েকজন বয়স্ক মহিলা ছিলেন। ছিল কয়েকটি বাচ্চাও। প্রায় আধঘণ্টা পর দেখি গেঁওখালির দিক থেকে জোয়ার আসছে। আমি তখন নৌকার পাটাতনে বসে। ৮-৯ বছর ধরে প্রায় রোজই এই পথে খেয়াপারাপার করি। জোয়ারের স্রোত দেখে আমি মাঝিকে বললাম এ ভাবে আড়াআড়ি নৌকা রাখলে কেন, বিপদ হতে পারে। মাঝি লক্ষ্মণ পাল বলল, ‘‘কিছু হবে না। তোমরা একটু সাবধানে বসে থাক।’’ এর একটু পরেই জোয়ারের প্রবল ঢেউ নৌকায় ধাক্কা মারল। জলের ধাক্কায় আমাদের নৌকাটা আড়াআড়ি উল্টে গিয়ে পরপর তিন পাক খেয়ে তলিয়ে গেল। নৌকা উল্টে যাওয়ার সময় অনেকে ছিটকে জলে পড়ে গিয়েছিল। আমি ও আরও ৪-৫ জন নৌকার মধ্যেই আটকে পড়ি। তিনবার পাক খাওয়ার পর নৌকা থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাই। কোনওরকমে নৌকার একটা কাঠের তক্তা ধরে ভাসতে থাকি। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার মতো অনেকেই তখন স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল। আধ ঘণ্টাখানেক ভেসে থাকার পরে হাওড়ার দিকে নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন আমাকে উদ্ধার করে। পা দিয়ে প্রচুর রক্ত ঝরছিল। ওঁরাই আমাকে হাওড়ার কমলপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তমলুকের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তমলুকে ডাক্তার দেখাতে আসার সময় প্রেসক্রিপশান, টাকা পয়সা ও মোবাইল ব্যাগে ছিল। সবই ভেসে গিয়েছে। তবে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি। আর কী চাই!