এমন ক্যানভাসে আঁধার সমাজের ছবি তুলে ধরবে খড়্গপুরের সঙ্ঘশ্রী। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর কাণ্ডে ‘উৎসবে’ ফেরার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যেই চলে এসেছে দুর্গাপুজো। উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে এই বার খড়্গপুর শহরের একাধিক মণ্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে কালো ও লাল রং। তবে কি আর জি কর কাণ্ডের জেরেই এমন রং ব্যবহারের সিদ্ধান্ত! উঠছে প্রশ্ন। একাংশ পুজো কমিটির সদস্যরা মেনে নিয়েছেন, আর জি কর কাণ্ডের জেরেই এই রং ব্যবহার। তবে একাংশ পুজো কমিটির আবার দাবি, দৃষ্টিনন্দনের জন্যই এমন রং ব্যবহার।
খড়্গপুর শহরের মনো-সমাজকর্মী প্রসেনজিৎ দে বলেন, “খুব সরলভাবে ধরলে কালো হল শোক, দুঃখ, অন্ধকারের প্রতীক। লাল হল প্রতিবাদ, বিপ্লব, শক্তির প্রতীক। আর জি কর কাণ্ডের পরে এই পুজোয় এই রংয়ের ব্যবহার এমন কারণে বলেই মনে হয়। তবে কালো রংয়ের আরও মনো-সামাজিক ব্যাখ্যা রয়েছে। মা কালীর রংও তো কালো। সেক্ষেত্রে অশুভকে বিনাশ করতে কিন্তু কালো রং ধারণ করতে হয়েছিল। সেভাবেই সমাজ শোধনে কালো রংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।” চিত্রশিল্পী জয় চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “কালো মানে মহাকাল। আবার কালো হল শূন্য। যেখানে মানুষের পিঠ ঠেকে যায় সেখানে কালো দিয়ে বোঝানো হয়। ইদানীং আমরা চিত্রকলায় কালো রং দিয়ে শোক-দুঃখ বোঝাচ্ছি। আবার লাল শক্তি বা বিপ্লবের প্রতীক। তাই মণ্ডপে এমন রংয়ের ব্যবহার অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। এ বার যে যেভাবে ধরবে সেটাই ঠিক।”
মালঞ্চ বালাজি মন্দির পল্লি উন্নয়ন সমিতি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাদের পুজো মণ্ডপে কালো ও লাল রংয়ের কাপড় ব্যবহারের কথা জানিয়েছিল। তাদের পুজো এ বার ৭৫ বছরে পা দিল। আর জি করের নির্যাতিতার কথা মাথা রেখেই কালো কাপড়ের উপরে মাটির কারুশিল্প ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন ওই কমিটির সম্পাদক সমীর গঙ্গোপাধ্যায়। সাউথ ইস্ট ডেভেলপমেন্টের সঙ্ঘশ্রী সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির পুজোর প্রবেশপথ আবার কালো রংয়ের ক্যানভাসে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সেই কালো ক্যানভাসেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নারী নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, কন্যা ভ্রুণ হত্যার মতো নানা প্রতীকী ছবি। মূল মণ্ডপেও রয়েছে কালো ও লাল রংয়ের ব্যবহার। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ মল্লিক বলেন, “প্রথমে রঙিন আলোর থিমের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের পরে ঠিক করলাম সমাজের নানা অপরাধের অন্ধকার পথও তুলে ধরব। তাই কালো ক্যানভাসে সেই অপরাধের ছবিতেই প্রবেশপথ তৈরি হয়েছে।”
সুভাষপল্লি জনকল্যাণ সমিতির পুজোর মণ্ডপও কালো ও লাল রংয়ের কাপড়ের ব্যবহারে গড়ে তোলা হয়েছে। যদিও থিমের নাম, ‘মাটির ঘরে মাটির উমা’। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক প্রশান্ত সরকার বলেন, “এর সঙ্গে আর জি কর কাণ্ডের কোনও যোগ নেই। আমাদের যে মণ্ডপ শিল্পী ছিলেন তিনি যে থিমের ছবি দেখিয়েছিলেন তাতে কালো ও লাল রংয়ের মণ্ডপ ছিল। সেভাবেই উনি মণ্ডপ সাজিয়েছেন। দেখতে ভাল লাগবে বলেই কালো ও লালের ব্যবহার।”
বোগদায় বাবুলাইন সর্বজনীনের গঙ্গা আরতির থিমের মণ্ডপেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। সেখানকার সম্পাদক সৌরভ দে অবশ্য বলছেন, “আর জি করের ঘটনার জন্য কালো ও লাল রংয়ের মণ্ডপ হয়েছে তা কিন্তু নয়। এই রংয়ের মণ্ডপ হলে তা দেখতে ভাল লাগবে বলেই করা হয়েছে।”