এগরার পাণিপারুল বাজারে বন্ধ কার্যালয় খুলে রং করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
মন্ত্রী ঘনিষ্ঠের বাড়িতে কোটি কোটি টাকা নগদ উদ্ধারের পরেই অস্বস্তি বেড়েছে শাসকদল তৃণমূলের অন্দরে। জেলায় জোড়াফুল শিবিরের নেতৃত্বও কার্যত কোণঠাসা। জনতার প্রশ্নবাণের মুখে পড়ার আশঙ্কায় দলীয় কর্মসূচিতেও ‘ধীর চলো’ নীতি দেখা দিয়েছে দলে। এই সুযোগকে এগরা মহকুমা এলাকায় কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে পরে এই মহকুমার পটাশপুর এলাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া দলীয় কার্যালয়গুলি ঝাড়পোঁছ করে খোলার কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে একাধিক কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে।
ভোট পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে পটাশপুর এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহ ছিল। বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী-সহ জেলার একাধিক নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সে সময় চাপে পড়েছিল জেলা তৃণমূল। বিজেপির দাপটে কোথাও তৃণমূলে কার্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, রাজ্যে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। অভিযোগ, এর পরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিজেপির একাধিক কার্যালয়ে হামলা ও লুটপাট চালায়। বিজেপি সূত্রের খবর, এগরা মহকুমায় বিজেপির ১১টি মণ্ডেলে আটটি দলীয় কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সেই কার্যালয়ই ফের খুলতে উদ্যোগী বিজেপি। সৌজন্য— শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূলের ‘নাকানিচোবানি’ দশা।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে ইডি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থকে মন্ত্রীর পদ এবং দলীয় থেকে আপতত সরানো হয়েছে। এতেই ফের উজ্জীবিত বিরোধী বিজেপি শিবির। পটাশপুরে-১ দক্ষিণ মণ্ডলে টেপরপাড়ায় বিজেপির দলীয় কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার খোলা হয়। পাণিপারুল বাজারে বন্ধ থাকা কার্যালয় শুক্রবার খোলা হয়েছে। উত্তর মণ্ডলে মংলামাড়ো বাজারের কার্যালয় এবং বোমা বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া নৈপুর কার্যালয়ও খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পটাশপুর-২ ব্লকে সাউৎখণ্ড এবং মথুরায় বন্ধ থাকা তিনটি কার্যালয় জেলা নেতৃত্বেদের উপস্থিতিতে খোলা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। ভগবানপুরেও একাধিক কার্যালয় খোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক সুকান্ত প্রধান বলেন, ‘‘দুর্নীতিতে জর্জরিত তৃণমূল নেতারা এখন জনসাধারণের ভয়ে রাস্তায় বেরতে পারছেন না। তাই দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা এখন বন্ধ থাকাকার্যালয় খুলছেন।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে এগরা মহকুমায় শতাধিক পাড়া বৈঠক হয়েছে। আগের থেকে অনেকটাই সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে। বুথ স্তরে সাংগঠনিক বৈঠকে আমজনতা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করছেন। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে মণ্ডল এবং বুথ ভিত্তিক সংগঠনিক বৈঠকেও জোর দিচ্ছে বিজেপি। তবে তৃণমূল দাবি করছে তারা বিজেপির কোনও কার্যালয় বন্ধ করায়নি। তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘ভোটের ফল ঘোষণার পরে কোথাও বিজেপির কার্যালয়ে হামলা বা বন্ধ করা হয়নি। জনসমর্থন না থাকায় নিজেরাই কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছে। এখন সেগুলো কোথাও খুলছে। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে তৃণমূলের উপর দায় চাপাচ্ছে।’’