—ফাইল চিত্র।
কেশপুরে বিজেপিতে বড় ধরনের ভাঙন ধরাতে চলেছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসতে পারেন শেখ সেলিম। ইতিমধ্যে সেলিম না কি, তাঁর অনুগামীদের নিয়ে এক বৈঠকও করেছেন। লোকসভা ভোটের পর থেকে যে দু’জন কেশপুরে বিজেপির ‘মুখ’ হয়ে উঠছিলেন, তাঁদের মধ্যে সেলিম একজন।
বোমা-গুলির মামলায় মাস পাঁচেক জেল খেটে চলতি মাসের গোড়ায় জামিনে মুক্ত হয়েছেন সেলিম। বৃহস্পতিবার তিনি বললেন, ‘‘আমি বিজেপি ছাড়ছি। আমার সঙ্গে আরও অনেকে বিজেপি ছাড়বেন।’’ কেন এই সিদ্ধান্ত? সেলিমের কথায়, ‘‘বিজেপির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে বিজেপির উপরে আর কোনও ভরসা রাখতে পারছি না।’’ শুধুমাত্র নয়া নাগরিকত্ব আইনের জেরেই কি দলত্যাগের সিদ্ধান্ত! সেলিম বলছেন, ‘‘না। শুধু এটা কারণ নয়।’’ তা হলে? ক্ষোভ উগরে দিয়ে সেলিমের জবাব, ‘‘বিজেপি দলটা সাধারণ মানুষের জন্য নয়। ওরা বিপদে মানুষের পাশে থাকে না। লোকসভায় এলাকায় বিজেপির হয়ে ভোট করেছিলাম। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে প্রয়োজনে বিজেপির নেতৃত্বকে পাশে পাইনি।’’
লোকসভা ভোটের পর থেকে কেশপুরে বিজেপির ‘মুখ’ হয়ে উঠছিলেন দুই নেতা। তন্ময় ঘোষ আর শেখ সেলিম। সিপিএম থেকে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানো তন্ময় আর সেলিমের নেতৃত্বেই কেশপুরের একের পর এক অঞ্চলে দলের পতাকা তুলেছিলেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। স্বাভাবিকভাবে একাধিক গোলমালের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এই দু’জনের। একাধিক মামলায় জুলাইতে গ্রেফতার হন সেলিম। পরে গ্রেফতার হয়েছেন তন্ময়ও। তিনি এখনও জেলবন্দি। তবে মাস পাঁচেক জেল খাটার পরে চলতি মাসের গোড়ায় জামিনে মুক্ত হয়েছেন সেলিম। তারপরই দলত্যাগের সিদ্ধান্ত। কার্যত বিজেপি নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সেলিমের দাবি, ‘‘বিজেপিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এখানে কেউ নেই।’’
সেলিম তো দল ছাড়ছেন? বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শাসক দলের চাপে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ দল ছাড়তে পারেন। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না। সাধারণ মানুষ বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন।’’ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলতে চাননি সেলিম। শুধু বলেছেন, ‘‘এখনও কিছু ঠিক করিনি। তিন- চারদিনের মধ্যেই যা জানার জানতে পারবেন।’’ তবে জল্পনা উস্কে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘বিজেপি ছেড়ে কেশপুরের শতাধিক কর্মী তৃণমূলে যোগ দেবেন। কয়েকজন আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। দলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। আমি বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ সেলিমও কি তৃণমূলে যোগ দেবেন? সদুত্তর এড়িয়ে অজিত বলেন, ‘‘কারও নাম এখনই বলছি না। এটুকু বলছি, কিছু মানুষ, যাঁরা আগে তৃণমূলই করতেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে- পরে বিজেপি করেছিলেন, তাঁদের অনেকে ভুল বুঝতে পেরে তৃণমূলে ফিরে আসতে চাইছেন।’’
কয়েকমাসের ব্যবধান। লোকসভা ভোটের পর যে গেরুয়া শিবির ফুলেফেঁপে উঠছিল। অভিযোগ উঠছিল, দলের মধ্যে ঢুকে পড়ছে বেনোজল, সেই বিজেপিতেই আজ ভাটার টান। যদিও জেলা বিজেপির এক নেতার দাবি, ‘‘দলের কর্মীদের কেউ কেউ সেই সন্ত্রাস ও পুলিশি জুলুমের ভয়ে এখন তৃণমূলের কাছে যেতে পারেন। তবে বিধানসভা ভোটের সময়ে ওঁরা তৃণমূলকে জবাব দেবেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কারও কারও কাজকর্মে আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম না। তাঁদের আসা- যাওয়া নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই!’’