West Bengal Panchayat Election 2023

বদলে গিয়েছে ভোটের চরিত্র, নির্দলেই ভরসা রাজেশের

সিন্টু ও রাজেশ দু’জনই এখন পদহীন। সিন্টু এবার সেভাবে প্রচারেও নেই। বিজেপিতে থেকে গেলেও গুরুত্ব হারিয়েছেন রাজেশ।

Advertisement

রঞ্জন পাল

হাড়দা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৭:২৪
Share:

স্ত্রীকে নিয়ে ভোটের প্রচারে রাজেশ। — নিজস্ব চিত্র।

এবার পঞ্চায়েতে নির্বাচনের আগে হাড়দার ছবিটা অন্যরকম।

Advertisement

এলাকার একদা দাপুটে নেতা রাজেশ মণ্ডলের সঙ্গে বিজেপি এবার দূরত্ব বজায় রাখছে। ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ধরে রাখতে এবার রাজেশের ভরসা নির্দল।অন্যদিকে দলীয় ক্ষমতা হারিয়ে কার্যত আড়ালে চলে গিয়েছেন এলাকার আরেক দাপুটে নেতা তৃণমূলের সিন্টু সাহা।

২০১৩ সালে হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল তৃণমূল। ওই সময় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন রাজেশের স্ত্রী ঝুমা। পরে পঞ্চায়েতের ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি সিন্টু সাহার সঙ্গে রাজেশের গোলমাল বাঁধে। সিন্টুর সম্পর্কিত শ্যালক রাজেশ বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিতে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজেশের নেতৃত্বে হাড়দা পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। রাজেশের স্ত্রী ঝুমা ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হন। তবে ২০২১ সাল থেকে ছবিটাবদলাতে থাকে।

Advertisement

বিধানসভা ভোটের আগে রাজেশ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিজেপি তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়। বিধানসভা ভোটে হাড়দার বেশিরভাগ বুথে পিছিয়ে যায় গেরুয়া শিবির। তবে তৃণমূলের তরফে রাজেশকে দলে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গড়িমসি করা হয়। এই আবহে রাজেশ মত পরিবর্তন করেন। কিন্তু হাড়দা পঞ্চায়েতের সমীকরণ তখন বদলে গিয়েছে। সেখানকার বেশিরভাগ সদস্য রাজেশ-ঝুমার বিরুদ্ধে চলে যান। ২০২১ সালের শেষে বিজেপির সদস্যরা অনাস্থা আনায় নতুন প্রধান হন দুর্যোধন সিং। এরপরে ওই পঞ্চায়েতের টেন্ডার জমাকে কেন্দ্র করে বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মারপিট হয়। সেই ঘটনায় রাজেশ-সহ ১৬ জনকে গ্রেফতার হয়। পরে রাজেশ জামিনে ছাড়া পান। যে সিন্টুর সঙ্গে লড়াইয়ে তৃণমূল ছেড়েছিলেন রাজেশ, তাঁকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে হাড়দা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পদ হারানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিন্টুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনিও জামিনে ছাড়া পান।

সিন্টু ও রাজেশ দু’জনই এখন পদহীন। সিন্টু এবার সেভাবে প্রচারেও নেই। বিজেপিতে থেকে গেলেও গুরুত্ব হারিয়েছেন রাজেশ। তাঁর অনুগামীদের এবার টিকিটও দেয়নি বিজেপি। রাজেশের দাবি, ১৭টি আসনের ওই পঞ্চায়েতের ১৫টিতেই নির্দল প্রার্থী দিয়েছেন তিনি। লিফলেট বিলি করে, ফ্লেক্স ছাপিয়ে প্রচার চলছে। রাজেশের দাবি, ‘‘আমি বিজেপিতেই আছি। হাড়দা অঞ্চলে যাঁরা বিজেপির জায়গা তৈরি করল তাঁদের এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। অযোগ্যদের টাকার বিনিময়ে প্রার্থী করা হয়েছে। তাই প্রকৃত বিজেপি কর্মীদের নিয়ে পঞ্চায়েতে লড়াই করছি।’’

তৃণমূল ও বিজেপি অবশ্য এই নির্দলদের গুরুত্ব দিচ্ছে না। এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজেশ ও তাঁর স্ত্রী মিলে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। এলাকার উন্নয়ন না হলেও রাজেশ বাড়ি, গাড়ি করেছেন। তাই তাঁর প্রার্থীদের মানুষ ভোট দেবেন না।

জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় থেকেও বিজেপি ওই এলাকায় কোনও উন্নয়ন করেনি। এলাকার মানুষজন গুন্ডবাজদের আর ক্ষমতায় আনতে চান না। এবার একক ভাবে পঞ্চায়েত দখল করব।’’

জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘হাড়দায় বিজেপির ফল গত বারের থেকেই ভাল ফল হবে। কে কোথায় কতজন নির্দল প্রার্থী দিলেন, সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি না।’’

দুর্নীতির অভিযোগ মানছেন না রাজেশ। বলছেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন অনেক কিছু‌ই মন্তব্য করবেন। জনগণ পাশে আছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement