ঘাটালের জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার পর পঞ্চায়েত ভোট। নিজেদের শক্তঘাঁটি ঘাটালে বেলাইন হতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। লোকসভা ভোটের আগে তাই পুরনো অস্ত্রে নতুন ভাবে শান দিল বিজেপি। রেলপথহীন ঘাটাল মহকুমার জন্য ‘কু ঝিক ঝিক’ স্বপ্ন ফেরি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে দীর্ঘ কয়েক দশকে প্রায় তামাটে হতে বসা স্বপ্ন ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের দায় এড়িয়ে দায়িত্ব চাপালেন শুধু রাজ্যের উপর। স্বাভাবিক ভাবে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসক শিবির।
সম্প্রতি ধূপগুড়ি বিধানসভা উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। আরও শক্তিহীন হয়েছে গেরুয়া শিবির। ধূপগুড়িতে গিয়ে মহকুমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উপ নির্বাচনে কি সেই প্রতিশ্রুতি কি কাজ করেছে? কাটাছেঁড়া চলছে রাজনৈতিক মহলে। ধূপগুড়ির মতোই ঘাটালও গেরুয়া শিবিরের শক্তি বেশি। এখানে বিধায়ক রয়েছে তাদের। যদিও প্রথমে পুরসভা এবং পর পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে পদ্ম। এ বার সামনে লোকসভা ভোট। ঘাটাল লোকসভা আসনটি তৃণমূলের। তবে নিজেদের জমি ফিরে পেতে শাসক দলকে কঠিন প্রতিযোগিতায় ফেলতে মরিয়া বিজেপি। এ ক্ষেত্রে তারা হাতিয়ার করতে চাইছে রেলকেই। রবিবার ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুল মাঠে বিজেপির ঘাটাল পূর্ব মণ্ডল কমিটির উদ্যোগে এক জনসভায় উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। ঘাটালের ওই সভামঞ্চ থেকে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সম্প্রতি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রাজ্যের বেশ কয়েকটি রেলপথ চালুর জন্য জমি চেয়ে নবান্নকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তার আগে রেলমন্ত্রী রাজ্যের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ঘাটালের বিধায়ক রেলমন্ত্রীর কাছে ঘাটালে রেলপথ তৈরির কথা তুলে ধরেন। তারপরই দ্রুত রেলপথ তৈরির জন্য জমি চেয়ে তৎপরতা শুরু হয়।তার মধ্যে ঘাটাল ইড়পালা রেলপথের কথাও উল্লেখ রয়েছে।” বিরোধী দলনেতার দাবি, ‘‘রেলমন্ত্রী রাজ্যকে বলেছেন, আমি টাকা নিয়ে প্রস্তুত। জমি দাও। রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
ব্যবসায়িক এলাকা হলেও ঘাটাল এখনও রেলপথ বিবর্জিত। মহকুমাবাসীকে ট্রেনে কোথাও যেতে গেলে হয় পাড়ি দিতে হবে ৩০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া তা না হলে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোড। ঘাটাল থেকে যার দূরত্ব আরও ১০ কিলোমিটার বেশি। অবশ্য সীমানায় অবস্থিত হুগলির গোঘাটে রেলপথ রয়েছে। তবে তার দূরত্বও ২৫ কিলোমিটারের কম নয়। কয়েক বছর আগে রেল বাজেটি গোঘাট-ইড়পালা রেলপথের উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর তা বেশিদূর এগোয়নি। লোকসভা ভোটের আগে রেল প্রতিশ্রুতিতে মন জয়ের চেষ্টা করলেন শুভেন্দু। তবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গে পুরো দায় রাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, কেন্দ্র টাকা দিয়েছে। রাজ্য তার অংশের টাকা দিচ্ছে না। তাই অধরা মাস্টার প্ল্যান। যদিও শাসক দলের পক্ষ থেকে ঠিক এর উল্টো দাবিই করা হয়। রেল ও মাস্টার প্ল্যান নিয়ে শুভেন্দুর মন্তব্যকে এ বারও কড়া সমালোচনা করেছে শাসক শিবিরি। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কোঅর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা যত মিথ্যা কথা বলছেন ,মানুষ তত তাঁর বিপক্ষে চলে যাচ্ছেন, যাবেও। মাস্টার প্ল্যান নিয়ে উনি ভুল তথ্য দিচ্ছেন। বাজেটে কেন্দ্র সরকার কোনও টাকা মাস্টার প্ল্যানের জন্য বরাদ্দ করেনি। তা হলে রাজ্য সরকারের বরাদ্দের প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের উদ্যোগে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন।’’ অন্যদিকে ঘাটালের রেল পথ নিয়ে অজিত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখনই ঘাটালে রেলপথ নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিজেপির আঠারো মাসে বছর। এখন ভোটের আগে তা নিয়ে খোঁজ খবর শুরু হয়েছে। ঘাটালের যদি রেলপথ হয়, সেটা হবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃতিত্বের দাবিদার শুভেন্দু অধিকারীরা নয়।’’
লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র সরকারের নয় বছরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরার জন্য বিজেপির প্রত্যেক মণ্ডল কমিটির উদ্যোগে জনসভা শুরু হয়েছে। এ দিন ঘাটাল পূর্ব মণ্ডলের উদ্যোগে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি। ঘাটালের মঞ্চ থেকে জি ২০ সম্মেলন সফল হয়েছে মনে করিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন বিরোধী দলনেতা। ঘাটালের জনসভায় বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটকেও কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমাদের একটা প্রধানমন্ত্রী। আর জোটের ২৬টি প্রধানমন্ত্রী।’’
এ দিনের জনসভায় শুভেন্দু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়, ঘাটালের বিধায়ক শীতল কপাট, ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি তন্ময় দাস অন্য নেতৃত্বরা।
বন্যায় ভাসে ঘাটাল। ভোটের আগে ভাসে মাস্টার প্ল্যানও। এ বার কিন্তু দূর থেকে ভেসে আসছে ট্রেনের বাঁশি।