পঞ্চায়েতের সামনে অবস্থান। নিজস্ব চিত্র
আমপানের ক্ষতিপূরণে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বিজেপির বিক্ষোভ ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল।
বুধবার সবংয়ের বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে এই অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন হয়। মূলত আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চনা, পক্ষপাতিত্ব ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধা প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগে জমায়েত করেছিল বিজেপি। ওই কর্মসূচির শেষে বিজেপির কর্মীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন হয়েছিল। সেই পর্ব মিটতেই তৃনমূলের কর্মীরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এমনকি দলের দু’জন কর্মীকে মারধর করা হয় দাবি করেছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের দাবি, গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বিজেপি কর্মীরা হামলা চালাচ্ছে খবর পেয়ে তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী পৌঁছতেই মাঠ ছেড়ে পালায় বিজেপি।
বিজেপির অভিযোগ, এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বহু মানুষ আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনও পর্যন্ত ২১ জন ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় থাকা অধিকাংশ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে দাবি বিজেপির। এমনকি, যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে অথচ ক্ষতি হয়নি তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধা বণ্টনেও দুর্নীতি হচ্ছে বলে বিজেপির অভিযোগ। ঘটনাটি নিয়ে দিন কয়েক আগে বিজেপি স্মারকলিপি দিতে গেলেও তৃণমূল পরিচালিত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তা নিয়ে অস্বীকার করে বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের।
বিজেপির সবং বিধানসভার পর্যবেক্ষক শিশির কুলভি বলেন, “এই বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের কর্মী যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাঁদের বেছে-বেছে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। চট দিয়ে বাড়ি ঢেকে ছবি তোলা হয়েছে। পরিযায়ীরা তাঁদের প্রাপ্য পাচ্ছে না। চরম দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিতে গেলেও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে অবস্থান বিক্ষোভ পালন করি।” একই সঙ্গে তাঁদের ওপর হামলার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত ওই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পার্বতী বেরা বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অফিসের বাইরে কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে আমার কাছে কেউ স্মারকলিপি নিয়ে আসেনি। কোনও কথা না বলে অবস্থান বিক্ষোভ পালন করেছে। অথচ আমাদের এলাকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনও পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।”
আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে পঞ্চায়েত অফিসে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে এসইউসিও। এ দিন দাঁতন ২ ব্লকের পোরলদা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে এই কর্মসূচি ছিল। এসইউসি দাবি পূর্বে বাদ দেওয়া আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের অনুদান প্রদান করতে হবে। ইতিমধ্যেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম বাদ পড়েছে। আবার যাদের পান বরোজ নেই এমন অনেকেই অনুদান পেয়েছেন। এমনও অভিযোগ তোলা হয়। বঞ্চিতদের দ্রুত তালিকাভুক্ত করে অনুদান দেওয়ার দাবি তোলেন নেতৃত্বরা।
অন্য জেলার তুলনায় পশ্চিম মেদিনীপুরে আমপানের প্রভাব কম। তাই ক্ষতিপূরণের পক্ষপাতের অভিযোগও কম। তবে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। এ দিন দাঁতনের এক দলীয় কর্মসূচিতে জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা নিয়ে কেউ কোনও দুর্নীতি করবেন না। এটা দলের নির্দেশ। যাঁরা করবেন তাঁরা গ্রেফতার হবেন।’’