গোটা ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাতভর বিজেপির নেতা-কর্মীরা ময়না থানা ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায়। মৃত বিজেপি কর্মীকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে! সোমবার রাতে ময়নার বাকচা পঞ্চায়েতের গোরামহল এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। যার জেরে এলাকা জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। মৃত বিজেপি কর্মী বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া (৬০) বিজেপির বুথ কমিটির সভাপতি। অভিযোগ, সোমবার রাতে বিজয়কৃষ্ণকে অপহরণ করা হয় এবং পরে তাঁকে খুন করা হয়। এ ছাড়াও সঞ্জয় তাঁতি নামে আরও এক বিজেপি কর্মীকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও শাসকদলের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। গোটা ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাতভর বিজেপির নেতা-কর্মীরা ময়না থানা ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। মঙ্গলবার সকাল থেকেও রাজ্য সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন তাঁরা। নিহত বিজেপি কর্মীকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে কি না, সে প্রসঙ্গে পুলিশের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
স্থানীয় বিজেপি নেতাদের দাবি, সোমবার বিকেল প্রায় ৫টা নাগাদ স্ত্রী ও পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির কিছু জিনিস কিনতে যাচ্ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ। অভিযোগ, সেই সময় পথে তৃণমূল আশ্রিত এক দল দুষ্কৃতী তাঁদের ওপর হামলা চালান। স্ত্রী ও পুত্রকে বাঁচাতে গেলে বিজয়কৃষ্ণকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীরা তাঁদের চিৎকার শুনে ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা বিজয়কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও বহু ক্ষণ তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে রাতের দিকে বিজয়কৃষ্ণের দেহ তমলুক হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘বিজয়কৃষ্ণকে অপহরণ করা হলেও পরে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশই তমলুক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। অথচ মৃতের পরিবারকে এ বিষয়ে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। গোটা ঘটনায় রহস্য দানা বাঁধছে। কী ভাবে দেহ পুলিশের কাছে গেল? অভিযুক্তদের কেন গ্রেফতার করা হয়নি? এ নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’’ সত্যি জানতে দরকার হলে আদালতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অশোক।
অশোকের অভিযোগ, ‘‘আমাদের আরও এক কর্মী সঞ্জয় তাঁতিকে অপহরণ করা হয়েছে। তাঁকে খুন করা হতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করছি। দুষ্কৃতীরা রাস্তায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেনি। গোরামহলে পুলিশের সামনেই রাতভর বোমাবাজি চলেছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে আমরা বার বার অভিযোগ জানাচ্ছি। এ বার গণতান্ত্রিক পথে আমরা এর মোকাবিলা করব।’’
যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন হাজরা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে গোরামহল গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী মণ্ডলের বাড়িতে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় ময়না থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। সেই ঘটনার জেরেই সোমবার বিকেল নাগাদ বিজয়কৃষ্ণের সঙ্গে কয়েক জনের ঝামেলা বাধে। নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এর পিছনে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’
মনোরঞ্জনের দাবি, ‘‘ঘটনাটিতে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে বিজেপির লোকেরা রাতভর তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তবে যে বা যাঁরা দোষী, তাঁদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনের ময়নায় বিজেপি প্রার্থী অশোকের জয়ী হওয়ার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বাকচা অঞ্চলের। শুধুমাত্র এই অঞ্চলেই তৃণমূলের থেকে ১০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এর পর থেকে এলাকায় প্রায়ই রাজনৈতিক সংঘর্ষ লেগে থাকে বলে স্থানীয়দের দাবি। কয়েক মাস আগেও বাকচা থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধার হয়েছিল। সম্প্রতি উত্তেজনার আবহে ময়না থানার ওসি বদল করে আইসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সংঘর্ষে এখনও রাশ টানা যায়নি বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।