Bengal Salt Factory

অবহেলায় পড়ে প্রফুল্লচন্দ্রের মূর্তি, কারখানা ধ্বংসস্তূপ

মন্দারমণি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রামনগর-২ ব্লকের দাদনপাত্রবাড়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় গড়ে তোলেন তোলেন ‘বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি’র কারখানা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মন্দারমণি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৪
Share:

এই সেই কারখানা। নিজস্ব চিত্র।

কয়েক দশক আগের জনমানবশূন্য সমুদ্র উপকূল আজ সারা রাজ্যের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র। সময়ের সঙ্গে বদলেছে মন্দারমণি। অথচ যাঁর হাত ধরে মন্দারমণির প্রথম পরিচিতি, সেই প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি’র কারখানা আজ ধ্বংসস্তূপ। চরম অবহেলায় পড়ে প্রফুল্লচন্দ্রের মূর্তিও।

Advertisement

মন্দারমণি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রামনগর-২ ব্লকের দাদনপাত্রবাড়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় গড়ে তোলেন তোলেন ‘বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি’র কারখানা। তবে আজ আর তার অস্তিত্ব নেই। সময়টা ছিল ১৯৩০ সাল। ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইনের প্রতিবাদে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। এই আন্দোলনের প্রভাব পড়ে তৎকালীন বাংলার অবিভক্ত মেদিনীপুরেও। জেলার অন্য জায়গার সঙ্গে রামনগরের বাঁকশালঘাট, পিছাবনি এলাকাতেও সত্যাগ্রহ আন্দোলন কার্যত স্বদেশী আন্দোলনের রূপ নেয়। আন্দোলনের জেরে পিছু হটে ব্রিটিশ সরকার। ইংরেজরা লবণ আইন প্রত্যাহার করে ভারতীয়দেরও সমুদ্র উপকূলে লবণ উৎপাদনের অধিকার দেয়।

এরপর কলকাতার কয়েকজন সম্পন্ন শিক্ষিত যুবককে উৎসাহিত করে ১৯৩৪ সালে প্রফুল্লচন্দ্র রায় দাদনপাত্রবাড়ে নির্জন সমুদ্র উপকূলে গড়ে তোলেন ‘বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি লিমিটেড’। তিনিই হন কোম্পানির চেয়ারম্যান। কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীতে ছিলেন যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, এন কে বসু, চারুচন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ। প্রায় ১,৬০০ একরেরও বেশি জমির উপর বিশালাকৃতির একাধিক ঘেড়িতে নুন মিশ্রিত জল জমিয়ে সূর্যের তাপকে কাজে লাগিয়ে লবণ তৈরির কাজ শুরু হয়। কারখানায় কাজ করতেন বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ৫০০ শ্রমিক। স্বাধীনতার পর ১৯৬১ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় কারখানা পরিদর্শন করেন। লবণ শিল্পের উন্নতির জন্য ফরাসি বিশেষজ্ঞদের নিযুক্তও করেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কোম্পানির ২৩ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় রাজ্য সরকারের শিল্প দফতর। তারপর প্রায় দু’দশক ভাল ভাবেই চলে কারখানাটি।

Advertisement

১৯৮৭ সাল থেকে কারখানাটি ক্রমেই রুগ্ন হতে শুরু করে। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে কারখানার লোকসানের বোঝা। ২০০০ সালে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি। কারখানার প্রাক্তন কর্মী মুক্তেশ্বর পয়ড়্যার দাবি, ‘‘১৯৯০ সাল থেকে কোম্পানির কর্মীদের বেতন, বোনাস, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি বাবদ এক কোটিরও বেশি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে।’’ নব্বইয়ের দশকে জীবিকার স্বার্থে কারখানার বঞ্চিত ৬০ জন শ্রমিক ৫০০ একর জমিতে সমবায়ের মাধ্যমে লবণ উৎপাদনের কাজ শুরু করে। আজও তা চলছে। কারখানার ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই আজও বসবাস করছেন ৪০ জন শ্রমিকের পরিবার। ভিন্‌ রাজ্য থেকে এক সময় কারখানায় কাজ করতে এলেও আর ফিরে যাননি তাঁরা। ক্ষোভের সঙ্গে অমিত শঙ্কর দাস নামে এক কর্মচারীর পরিবারের সদস্য জানান, ‘‘বেঙ্গল সল্ট কোম্পানির জায়গায় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার কথা ছিল, হয়নি। পরে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার কাজ শুরু হলেও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’

কাছেই স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বসেছিল প্রফুল্লচন্দ্রের মূর্তি। ২০১৮ সাল নাগাদ ঘটা করে সেই মূর্তির উদ্বোধন হয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মাফিক মূর্তির চারদিকের লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা হয়নি। মাথার উপরে ছাদটুকুও করা হয়নি। ফলে খোলা আকাশের নীচেই অযত্নে পড়ে রয়েছে প্রফুল্লচন্দ্রের মূর্তি। এ বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বলছেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement