গোলমাল মেটার পরে শুরু হয় অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহল উৎসবে বিজেপি-র জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ না-জানানোর অভিযোগে বিডিওকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল বিজেপি-র জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। সোমবার এই ঘটনার জেরে গোপীবল্লভপুর ১ ব্লক সদর ছাতিনাশোলে ব্লক অফিসে উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় পুলিশ বাহিনী। গোলমালের জেরে বন্ধ হয়ে যায় গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের জঙ্গলমহল উৎসব।
এদিন সকালে ছাতিনাশোলে গোপীবল্লভপুর ১ ব্লক অফিস প্রাঙ্গণে ব্লকস্তরের জঙ্গলমহল উৎসব শুরু হওয়ার কথা ছিল। গোপীবল্লভপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। উৎসব শুরুর আগে বিডিও-র অফিস ঘরে বসেছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি তৃণমূলের ক্ষমতাসীন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ মনোরমা পাত্র। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিডিও-র ঘরে আচমকাই চড়াও হন গোপীবল্লভপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সভাপতি দাঙ্গি সরেন, জেলা পরিষদের বিজেপি সদস্য দুলালি দাস-সহ পঞ্চায়েত সমিতির সমস্ত কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যরা।
অভিযোগ, বিডিওর অফিস ঘরে ঢুকে দাঙ্গির নেতৃত্বে বিজেপি-র জনপ্রতিনিধিরা বিডিও-র টেবিল চাপড়ে, গালিগালাজ করে বিডিও দেবজ্যোতি পাত্রের জামা ধরে টানা হয়। ওই সময়ে বিডিও-র ঘরে হাজির হন জেলা পরিষদের তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ মনোরমা পাত্র। মনোরমা বলেন, ‘‘বিজেপি-র জনপ্রতিনিধিরা বিডিওকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের দাবি ছিল, উৎসব মুলতবি ঘোষণা করতে হবে। বিডিও সাহেবের নিরাপত্তারক্ষীরা এসে বিক্ষুব্ধ বিজেপি-র জনপ্রতিনিধিদের নিরস্ত করেন।’’ খবর পেয়ে ডিএসপি (অপারেশন ২) সুব্রত মণ্ডল ও গোপীবল্লভপুরের আইসি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। পরে আলোচনার মাধ্যমে বিকাল চারটেয় উৎসব শুরু হয়। ধামসা বাজিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন দাঙ্গি সরেন। গোপীবল্লভপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দাঙ্গি সরেন বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না-করেই বিডিও একতরফা উৎসব সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিডিও সাহেব নিজে সব সিদ্ধান্ত নিলে ঝামেলা তো হবেই।’’ বিডিওকে হেনস্থার অভিযোগ প্রসঙ্গে দাঙ্গির জবাব, ‘‘আমাদের কৈয়িফৎ চাওয়া কি অন্যায়?’’
বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে ওই ব্লকের কৃষি মেলায় বিজেপি-র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম ওই মেলায় গেলে তাঁকেও অসম্মান করা হয়েছিল। ওই পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি জনপ্রতিনিধিরা মানুষের ভোটে নির্বাচিত। কিন্তু শাসকদলের ধামাধারী বিডিও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন। সেই কারণেই জনপ্রতিনিধিরা বিডিও-র সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। হেনস্থার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ বিডিও দেবজ্যোতি পাত্রের কথায়, ‘‘পুরো ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছি।’’ পুলিশ সূ্ত্রে খবর, প্রকৃত ঘটনা জানতে বিডিও অফিসের সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘বিডিওকে হেনস্থা করার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’’