জল আতঙ্ক

পানীয় জলের মধ্যে থিকথিক করছে মারণ ব্যাকটেরিয়া। তা-ও আবার খাস মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে! জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মেডিক্যালে এসে জলের নমুনা পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি (পিএইচই) দফতরের একটি দল।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

এই জলেই বাসা বেঁধেছে জীবাণু। তবে তা জানানোর গরজটুকুও নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে চলছে ‘নিষিদ্ধ’ জলপান। — সৌমেশ্বর মণ্ডল।

পানীয় জলের মধ্যে থিকথিক করছে মারণ ব্যাকটেরিয়া। তা-ও আবার খাস মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে!

Advertisement

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মেডিক্যালে এসে জলের নমুনা পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি (পিএইচই) দফতরের একটি দল। পরে পিএইচই-র পরীক্ষাগারে ওই জল পরীক্ষা করে মারণ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির বিষয়টি সামনে আসে। তারপর পিএইচই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয় জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। জেলা স্বাস্থ্য ভবন থেকে রিপোর্ট পৌঁছেছে মেডিক্যালেও। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে হাসপাতালের অন্দরে। জোর চর্চা শুরু হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য ভবনেও। মেডিক্যালের এক কর্তা মানছেন, “এমন রিপোর্টের কথা শুনেছি। জেলার সবথেকে বড় হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল। এখানে রোজ কত রোগী আসেন। এখানে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত! পরিস্রুত জল সরবরাহের দিকে এ বার আরও বেশি নজর দেওয়া হবে!”

জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারা অবশ্য বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ব্যস্ত। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “মেডিক্যালের জল ঠিকঠাকই রয়েছে।” তবে পরক্ষণে তাঁর বক্তব্য, “এত বড় হাসপাতাল। এক-দু’টো জায়গায় কিছু সমস্যা থাকতে পারে। এটা এমন কোনও ব্যাপার নয়।” আর হাসপাতাল সুপার তন্ময় পাঁজার বক্তব্য, “পিএইচই হাসপাতালের জলের পরীক্ষা করেছে। রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

সূত্রের খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যালে ৮টি জায়গার জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩টি জায়গায় ই-কোলির মতো ব্যাকটেরিয়া মিলেছে। এই তিনটি জায়গা হল— ক্যান্টিনের সামনের জলাধার, মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল এবং নার্সিং হস্টেল। তিন জায়গাতেই মিলেছে ই-কোলি অর্থাৎ ইসকেরিয়া ব্যাকটেরিয়া। চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, এই ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। কুড়ি মিনিটের মধ্যে একটি থেকে দু’টি হয়ে যায় এবং ছ’ঘন্টার মধ্যে দশ লক্ষে পৌঁছে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে প্রাথমিক ভাবে এদের মারা যায়। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক যেহেতু একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করে, তাই পরিমাণে কম হলে তার কার্যকারিতাও কমে যায়। আর সেই সুযোগেই জিন মিউটেশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে এই ব্যাকটেরিয়া।

জলে ই-কোলি থাকলে কী কী রোগ ছড়াতে পারে?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডায়েরিয়া, অ্যানিমিয়ার মতো রোগ হতে পারে। এর থেকে নানা সংক্রমণও ছড়াতে পারে। ফলে, রোগীর পরিজন থেকে ডাক্তারি ও নার্সিংয়ের পড়ুয়া, সকলেই উদ্বিগ্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিক্যাল ছাত্রের কথায়, ‘‘শুনছি আমাদের হস্টেলের জল পরিস্রুত নয়। যদি সত্যি তাই হয়, তাহলে তো সমস্যা।’’ অজয় অধিকারী, পম্পা পালের মতো রোগীর পরিজনেরাও বলছেন, “হাসপাতাল নিজেই যদি ব্যাকটেরিয়ার আঁতুড়ঘর হয় তাহলে আর রোগ সারবে কী করে!”

হাসপাতালেরও এক সূত্রের দাবি, বিষয়টি উদ্বেগের। বিশেষ করে যে সব জায়গায় পরিস্রুত পানীয় জল থাকা আবশ্যিক, সেই ক্যান্টিন, হস্টেলে এই জীবাণু মেলায় বিষয়টি মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের একাংশকে ভাবাচ্ছে। হাসপাতালের এক কর্তার স্বীকারোক্তি, “পুরো বিষয়টি উদ্বেগজনক। রিপোর্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। এ বার থেকে নিয়মিত জল পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement