সমীর দাস। নিজস্ব চিত্র
ছিলেন পশুপ্রেমী। টান ছিল হাতির প্রতি। হাতি আসলে নিজেই গ্রামে খবর দিতেন। সচেতন করতেন। হাতিই কাড়ল তাঁর প্রাণ।
রবিবার রাতে হাতি ঢুকেছিল বিনপুর থানার কেন্দবনি এলাকায়। অন্য দিনের মতো সেখানে গিয়েছিলেন কাঁকো গ্রামের বাসিন্দা সমীর দাস (৪৭)। এবার আর ফেরা হল না তাঁর। স্থানীয় সূত্রে খবর, অবিবাহিত সমীর ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। এলাকায় পরোপকারী হিসেবে পরিচিত ওই ব্যক্তি স্থানীয় একটি ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন। বাবুলাল হাঁসদা নামে তাঁর এক বন্ধু বলেন, ‘‘এলাকায় যে কোনও মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকত সমীর। হাতির খবর শুনলেই ছুটে যেত। হাতি দেখা ওঁর নেশা ছিল। বারবার বারণ করলেও শুনত না। রবিবার রাতে না গেলে এভাবে জীবনটা যেত না।’’ কাঁকো গ্রামের বাসিন্দা তথা কাঁকো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুব্রত রায়ের আক্ষেপ, ‘‘খুবই উপকারী ছিলেন। হাতি আসলেই অনেক লোকের প্রাণ বাঁচিয়েছে। হাতি আসলে সতর্ক করত। এভাবে চলে যাবে ভাবতে পারছি না।’’
বন দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম ডিভিশনে এখন ২৭টি হাতি রয়েছে। রবিবার রাতে তার মধ্যে ৭টি হাতি ছিল শিলদা রেঞ্জের কেন্দবনি জঙ্গলে। রাতের হুলাপার্টির লোকজন হাতিগুলিকে তাড়া করছিলেন। পুলিশ কর্মীরাও ছিলেন। তা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রামগুলির কয়েকশো বাসিন্দা। সমীরও তাঁর মধ্যে ছিলেন। রাত দশটা নাগাদ হাতির কাছাকাছি চলে আসেন তিনি। ছুটে পালাতে পারেনি। একটি হাতি শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে তাঁকে। উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেখ ফরিদ বলেন, ‘‘আমরা দু’দিক থেকে ব্যারিকেড করেছিলাম। মানুষজনকে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। তারপরেও প্রচুর লোক হাতি দেখতে এসেছিলেন। বারবার বারণ করার পরেও কেউ কথা শোনেননি। এলাকায় হাতি থাকলে সন্ধ্যা ছ’টার পর বেরোতে বারণ করছি। তারপরেও রাত দশটার সময়ে লোকজন সেখানে কী করতে গিয়েছিলেন!’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘হাতির পাশে গেলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আমাদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। বারবার প্রচার করার পরেও অনেকে কথা শুনছেন না। আমরা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। কিন্তু মানুষের জীবন তো চলে যাচ্ছে।’’