বছর তিনেক ধরে ঘাটাল মহকুমার ক্ষীরপাই শহরের হালদারদিঘি মোড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত সে। — ফাইল চিত্র।
পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচায় ভাটা। তাই নিজেকে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ কর্তা বলে পরিচয় দিয়ে হুমকি ব্যবসায় নেমেছিল এক যুবক। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে বদলেছিল নিজের নামও। তবে শেষ রক্ষা হল না। দক্ষিণ ভারতের ওই যুবককে বুধবার রাতে পুলিশ আটক করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসেনজিৎ বৈরাগী নামে ওই যুবক থাকত অন্ধপ্রদেশে। আদি বাড়ি ছত্তীসগঢ়ে। তবে বছর তিনেক ধরে ঘাটাল মহকুমার ক্ষীরপাই শহরের হালদারদিঘি মোড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত সে। এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পুরনো (অ্যান্টিক) জিনিসপত্র কেনাবেচার কারবার করত। সম্প্রতি ওই ব্যবসায় মন্দা চলছিল বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে। টাকা না থাকায় সন্ধান পেয়েও অ্যান্টিক জিনিস কিনতে পারছিল না সে। নগদ টাকার প্রয়োজন মেটাতেই সে ‘হুমকি চিঠি’ পাঠানোর ব্যবসা ফেঁদে বসে।
ক্ষীরপাই শহর-সহ লাগোয়া এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও সম্পন্ন পরিবার বেছে ওই চিঠি পাঠানো হচ্ছিল। রাতের অন্ধকারে সাদা কাগজে হুমকি চিঠি বাড়িতে ফেলে দিয়ে চম্পট দিত প্রসেনজিৎ। চিঠিতে নিজেকে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ কর্তা বলে পরিচয় দিত সে। ইংরেজি ও হিন্দিতে ওই চিঠি পাঠানো হত বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারও কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা, আবার কারও থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হত। কোথায়, কী ভাবে টাকা পৌঁছে দিতে হবে, তাও উল্লেখ করা থাকত চিঠিতে। মূলত ক্ষীরপাই শহরের বিভিন্ন হোটেলের নাম দিয়ে তার পিছনে টাকার ব্যাগ পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হত। বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। যদিও পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার ক্ষীরপাইয়ের একটি মোটর বাইক শো-রুমে গিয়ে চিঠি ফেলার তোড়জোড় করছিল প্রসেনজিৎ। তখনই পুলিশের টহলদাবি গাড়ির নজরে পড়ে যায় সে। সন্দেহ হওয়ায় ক্ষীরপাই ফাঁড়ির পুলিশ প্রসেনজিৎকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। তারপর বুধবার রাতেই পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা ফাঁড়িতে এসে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশের জেরায় একসময় হুমকির চিঠির কথা স্বীকার করে সে। তার ব্যাগ থেকে একাধিক হুমকি চিঠি উদ্ধারও হয়েছে।
পুলিশকে অভিযুক্ত জানিয়েছে, যাতে চিঠি পড়ে সহজেই তার হাতে টাকা আসে, সে জন্য বদলে বদলে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নাম ব্যবহার করত প্রসেনজিৎ। তবে চিঠি দেওয়ার পরে এক পয়সাও তার হাতে আসেনি। তার আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল ওই যুবক। জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ওই ভুয়ো হুমকি চিঠির ঘটনায় আর কেউ যুক্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।”