আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান একই জায়গায় লাগাতার অবরোধের ডাক দেওয়ায় সপ্তাহান্তে ঝাড়গ্রামের পর্যটন ব্যবসা মার খাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফাইল চিত্র।
‘রেল-রোড চাক্কা জ্যামে’ ফের ‘অবরুদ্ধ’ হওয়ার আশঙ্কায় জঙ্গলমহল! আজ, শনিবার সারনা ধর্মের কোড চালু-সহ নানা দাবিতে পাঁচ রাজ্যে (বাংলা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও অসম) রেল রোড চাক্কা জ্যাম-এর ডাক দিয়েছে ‘আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান’ নামে একটি সংগঠন। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার মূল অবরোধ কর্মসূচিটি হবে খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে।
সংগঠন সূত্রের খবর, খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হবে। গত বছর সেপ্টেম্বরে পুজোর আগে একাধিক কুড়মি সংগঠন নানা দাবিতে টানা পাঁচদিন খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান একই জায়গায় লাগাতার অবরোধের ডাক দেওয়ায় সপ্তাহান্তে ঝাড়গ্রামের পর্যটন ব্যবসা মার খাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আশার কথা একটাই, শেষ মূহূর্তে অবরোধ লাগাতার না করে সময়সীমা কমানো হতে পারে বলে জানিয়েছে আদিবাসী সংগঠনটি। আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক রবিনকুমার মান্ডি বলছেন, ‘‘সকাল ছ’টা থেকে খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু হবে। অবরোধ লাগাতার হওয়ার কথা থাকলেও সময়সীমা কিছুটা শিথিল হতে পারে।’’ সেইসঙ্গে রবিন জুড়ছেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের অনুসূচি ২৫ অনুযায়ী ধর্মাচারণের সুনিদিষ্ট কোড আমাদের মৌলিক অধিকার। তা-ও যদি ভিখারির মতো চাইতে হয়, তাহলে তো আন্দোলনে যেতেই হবে।’’
প্রসঙ্গত, সারনা ধর্মের কোডের দাবিতে দু’বছর আগে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান। সেবার ১২ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি থাকলেও টেট পরীক্ষার জন্য ঘন্টা খানেক টাটা-খড়্গপুর শাখার রেলপথ ও পাশে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল।
ওড়িশার প্রাক্তন সাংসদ সালখান মুর্মুর নেতৃত্বে কয়েক বছর ধরে সারনা ধর্মের কোড চালুর দাবি করে চলেছে আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান নামে সংগঠনটি। ওই সংগঠনের মূল কার্যকর্তা হলেন সালখান। তবে শনিবারই সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রথম শহিদ তিলকা মাঝির জন্মদিন। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ভাগলপুরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এমন দিনে আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। সাঁওতালদের ওই সামাজিক সংগঠনটির ঝাড়গ্রাম জেলার নেতা (জেলা পারানিক) সূর্যকান্ত মুর্মু বলছেন, ‘‘বাবা তিলকা মাঝির জন্মদিনে এ ধরনের অবরোধ কর্মসূচি অনভিপ্রেত। আমরা ওদের সমর্থন করছি না।’’ এ প্রসঙ্গে রবিনকুমার মান্ডির জবাব, ‘‘আমরা তিলকা মাঝিকে স্মরণ করে বিদ্রোহে নামছি। স্বাধীন দেশে আমরাও তো কার্যত পরাধীন।’’ তবে ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপকুমার পাল বলছেন, ‘‘সংগঠনের অবরোধের কারণে শনিবার বাস চালানো হবে না।’’