ফাইল চিত্র।
শ্রমিকদের একাংশকে কারখানায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল হলদিয়া রিফাইনারিতে (আইওসি)। শাসকদল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, কারখানার গেটে তারা শ্রমিকদের গেটপাস কেড়ে নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চললে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। সেই জন্য এ বিষয়ে নজর দিতে বলে রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠি পেয়ে জেলাশাসকের দফতর থেকে শ্রম দফতরকে এ নিয়ে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
হলদিয়া রিফাইনারিতে প্রায় দেড় হাজার স্থায়ী এবং সাড়ে চার হাজার ঠিকা শ্রমিক কাজ করেন। ঠিকা শ্রমিকদের প্রতি মাসে গেট পাস দেওয়া হয়। চলতি মাসে বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়। হলদিয়ায় বিজেপি প্রার্থী তাপসী মণ্ডল জয়ী হয়েছেন। এর পরেই ওইসব ঠিকা শ্রমিকদের কাছ থেকে গেটপাস কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিকা শ্রমিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কারখানার ভিতরে তাঁরা ঢুকতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ, গেটে একটি শ্রমিক সংগঠন এই গন্ডগোলের নেপথ্যে রয়েছে। আর ওই শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে হলদিয়া পুরসভার এক পুর পারিষদ তথা তৃণমূল নেতা রয়েছেন বলে দাবি।
এভাবে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করে রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে চিঠিতে দিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, তাতে রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ এ-ও জানিয়েছেন যে, প্রত্যেকবার ওই শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে তা পালন করা হয় না। বরং এখনও একই কায়দায় ঠিকা শ্রমিকদের কাছ থেকে গেটপাস কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
হলদিয়া রিফাইনারি থেকে জ্বালানি তেল, রান্নার গ্যাস এমনকি বিমানের জ্বালানি তেল উৎপন্ন হয়। এখান থেকেই তা গোটা পূর্ব ভারতে সরবরাহ করা হয়। শ্রমিক সঙ্কটের জেরে উৎপাদন বিঘ্নিত হলে রান্নার গ্যাস এবং জরুরিকালীন বিমানের জ্বালানির সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। হলদিয়া রিফাইনারি জেনারেল ম্যানেজার এস এন ঝার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। তবে টেক্সট মেসেজে জানিয়েছেন যে, তিনি বিশেষ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। ফোন ধরেননি জেলাশাসকও।
তবে জেলা প্রশাসন যে অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে, তা জানাচ্ছেন হলদিয়ার মহকুমাশাসক অবনীত পুনিয়া। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসকের অফিস থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনারকে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। তিনি যা রিপোর্ট দেবেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করা হবে।’’ তবে অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার দিপালী চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনও চিঠি হাতে পাইনি। তবে কারখানার বাইরের সমস্যা নিয়ে আমাদের করার কিছুই নেই। এটা তো প্রশাসনিক দায়িত্ব।’’
এবারের বিধানসভা ভোটের প্রচারে অন্যতম হাতিয়ার ছিল কর্মসংস্থান। কিন্তু ভোটের ফল বার হওয়ার পরে হলদিয়ার কারখানায় শ্রমিকদের ঢুকতে না দেওয়ার ব্যাপারে যে রকম অভিযোগ উঠছে, তাতে প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে তৃণমূল। এক দিন আগেই সুতাহাটার একটি কারখানায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব শ্রমিকদের ঢুকতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ ব্যাপারে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘অন্যায় হলে প্রশাসন আইন মেনে পদক্ষেপ করবে। রাজ্য সরকার আগেই এ ব্যাপারে প্রশাসনকে বলেছিল। হলদিয়া রিফাইনারির ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা প্রশাসন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।’’