BJP

BJP-TMC: বিজেপি নেতা খুনে কাঠগড়ায় তৃণমূল

বিজেপি করায় ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূলের লোকজন খুন করেছে দাবি চন্দনের বাবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩১
Share:

নিহত চন্দনের বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

ভাইফোঁটার রাতে তাস খেলে প্রতিবেশী এক কাকুর সঙ্গে বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়েছিলেন বিজেপি নেতা চন্দন মাইতি (৩৬)। পরে ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরোলে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চন্দনকে উদ্ধার করে প্রথমে ভগবানপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তমলুকে নিয়ে যাওয়া পথে তাঁর মৃত্যু হয়। বিজেপি করায় ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূলের লোকজন খুন করেছে দাবি চন্দনের বাবার। রবিরার রাতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

Advertisement

তবে শনিবার রাতে ভগবানপুরের মহম্মদপুরে বিজেপি নেতা চন্দন মাইতির খুনের ঘটনা বছর তিনেক আগের ভেড়ি কাণ্ডে খুন হওয়া তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের স্মৃতি ফের উস্কে দিল। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগবানপুর-১ পূর্ব মণ্ডলের প্রমুখ ছিলেন চন্দন মাইতি ওরফে শম্ভু। গত বিধানসভা ভোটে মহম্মদপুর বুথে বিজেপি দুশোর বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল। একদা বাম সমর্থক চন্দন গত লোকসভা ভোটের পর থেকে বিজেপির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বিজেপি তাঁকে শক্তি কেন্দ্রের প্রমুখ নির্বাচন করে। নিজের পরচুলা বাছাইয়ের ব্যবসা ছিল। সেই সঙ্গে মহম্মদপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ঠিকাদারির লাইসেন্স বের করেছিলেন চন্দন। দু'মাস আগে পঞ্চায়েত অফিস থেকে দেড়েদিঘিতে লাইট পোস্ট বসানো টেন্ডার পান তিনি। অভিযোগ, কাজ করতে গেলে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাঁর কর্মীদের মারধর করে কাজ করতে বাধা দেয়। সেই ঘটনায় থানা-পুলিশ হয়। শনিবার ভাইফোঁটার জন্য চন্দনের স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যান। বাড়িতে একা ছিলেন চন্দন। রাত দশটা নাগাদ প্রতিবেশী এক কাকুর সঙ্গে বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েন।

সূত্রের খবর রাতে তাঁর এক পরিচিত ফোন করলে তিনি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূল আশ্রিত একদল দুষ্কৃতী তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপায়। তারপর মরে গিয়েছে ভেবে দেড়েদিঘিতে তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের কলেজের পিছনে কেলেঘাই নদীর পাড়ে দেহ ফেলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। রাত দেড়টা নাগাদ ভগবানপুর থানার পুলিশ গিয়ে ওই বিজেপি নেতাকে উদ্ধার করে ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাঁকে তমলুক মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। বিজেপি করার অপরাধে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা চন্দনকে খুন করছে বলে দাবি পরিবারের। চন্দনের বাবা প্রভাত মাইতি বলেন, ‘‘আমার ছেলে বিজেপি করায় তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। দোষীদের বিচার চাই।’’ বিজেপিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই মহম্মদপুরে তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধান ভেড়ি কান্ডে খুন হয়েছিলেন। শনিবার ফের খুনের ঘটনায় থমথমে গোটা এলাকা। অশান্তি ঠেকাতে দেড়েদিঘি ও মহম্মদপুর গ্রামে নিহত বিজেপি নিতার বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মহম্মদপুর থেকে এক কিলোমিটার দূরে নান্টু প্রধানের কলেজের পিছনে কেন নদীর পাড়ে চন্দনকে ফেলে রাখা হল তা নিয়ে নানা প্রশ্নে জল্পনা তৈরি হয়েছে। রবিবার রাতে চন্দনের স্ত্রী থানায় খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে নাম রয়েছে নান্টু প্রধানের ভাই পিন্টু প্রধানের।

বিজেপি নেতা চন্দন মাইতি। নিজস্ব চিত্র।

এগরা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক মহম্মদ বৈদুজামান বলেন, ‘‘রাতে দেড়েদিঘি নদীর পাড় থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।’’

খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্যক্তিগত আক্রোশেই চন্দনকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে দুষ্কৃতীরা ওই বিজেপি কর্মীকে খুন করেছে। এখানে তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। পুলিশের কাছে আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীর শাস্তির দাবি জানিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement