ফাইল চিত্র।
প্রাথমিকে নিয়োগের দুর্নীতি-মামলা চলছে হাই কোর্টে। মামলাকারীদের আইনজীবী মঙ্গলবারই আদালতে তৃণমূল নেতাদের সুপারিশ করা চাকরিপ্রার্থীদের নামের নথি জমা দিয়েছেন। আইনজীবী সূত্রের খবর, সুপারিশকারী নেতা হিসাবে রয়েছে মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির নাম। এমন আবহে মঙ্গলবারই সমাজ মাধ্যমে মন্ত্রী অখিলের প্যাডে সুপারিশ করা চাকরীপ্রার্থীদের নামের একটি তালিকার প্রতিলিপি (ওই প্রতিলিপির সঙ্গে আদালতে জমা পড়া নথির মিল রয়েছে কি না, তা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা) ছড়িয়েছে পড়েছে।
ভাইরাল হওয়া ওই প্রতিলিপিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিরোধীরা। পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আশিস প্রামাণিকে অভিযোগ, মন্ত্রীর প্যাডে যে সব ব্যক্তিকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল, তাঁরা অনেকেই এখন স্কুলে চাকরি করছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন খোদ রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা দাস মহাপাত্র। সিপিএম দাবি করছে, সুপারিশ পত্রে থাকা অন্তত ১০ জনের চাকরি হয়েছে। এঁদের মধ্যে চারজন রামনগর চক্রে, পাঁচজন পিছাবনী চক্রের এবং একজন দিঘা চক্রের একটি স্কুলে চাকরি করছেন।
মঙ্গলবার সামজ মাধ্যমে সুপারিশ পত্রের যে প্রতিলিপিটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, উপরে বা’দিকে লেখা রয়েছে অখিল গিরি নাম। নীচে লেখা রয়েছে বিধায়ক, পশ্চিমবঙ্গ। ডান দিকে রয়েছে বিধায়কের কাঁথির বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নম্বর। এর নীচে চাকরি প্রার্থীদের নাম, রোল নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কে কোনও ক্যাটাগরির, তা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সুপারিশপত্রে ২০১৩ সালের ১২ অগস্টের তারিখও উল্লেখ রয়েছে। নীচে সই রয়েছে অখিল গিরির। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আশিস বলছেন, ‘‘বিধায়কের সুপারিশপত্রে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা সকলেই শাসকদলের নেতা এবং সক্রিয় কর্মীদের পরিবারের লোকজন। এদের মধ্যে ১০ জন কোথায় কোন স্কুলের নিয়োগপত্র পেয়েছেন, তা আমরা জানতে পেরেছি। বাকিদেরও খোঁজ করা হচ্ছে।’’
সুপারিশ পত্রে ১৭ নম্বরে নাম রয়েছে তৃণমূল নেত্রী শম্পার। ২০১৩ সালে রামনগরের নরিহা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা চাকরি পেয়েছেন তিনি। শম্পা সুপারিশের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকারও করছেন না। ভাইরাল হওয়া সুপারিশ পত্রের প্রসঙ্গ উঠতেই বুধবার শম্পার দাবি, ‘‘অসুস্থ থাকা অবস্থায় টেট দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। কেউ আমার নাম সুপারিশ করতেই পারেন। তবে আমি যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছি এবং আমার কাছে সমস্ত নথিপত্র রয়েছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই সুপারিশপত্রে নাম ছিল সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিতাই সারের ছেলে পুষ্পরঞ্জন সারেরও। তবে প্রাথমিকে তাঁর চাকরি জোটেনি বলে জানা গিয়েছে। তালিকায় শাসকদলের নেতা শ্রীপতি দাসের স্ত্রী মনিকা দাস এবং বিডিও অফিসের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারীর পরিজনেরও নাম রয়েছে। তাঁরা আপাতত স্কুলে চাকরি করছেন বলে জানা গিয়েছে।
ওই ভাইরাল প্রতিলিপি নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিজেপিও। গেরুয়া শিবিরের বিধায়ক অরূপ দাস বলেন, ‘‘প্রাথমিকে শিক্ষকতার প্রাথমিক শর্ত টেট পাস করা। তবে টেট পাশ করলেই চাকরি নাও হতে পারে। যোগ্যতা অর্জনের বাকি পরীক্ষার ধাপগুলিতে বিধায়কের সুপারিশ পত্রে যাঁদের নাম লেখা রয়েছে, তাঁদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্র আদালতের যাচাই করে দেখা উচিত।’’ এই সুপারিশ পত্র ঘিরে বিতর্ক শুরু হতেই মন্ত্রী অখিল গিরি বলেছেন, ‘‘যে প্যাড নিয়ে বলা হচ্ছে, সেখানে আমার সই রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’