ঝাড়গ্রাম স্টেশনে সাংসদ কুনার হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলমহলের রেল স্টেশনগুলিতে অলচিকি লিপিতে সাঁওতালি ভাষায় ‘নেম বোর্ড’ লেখার কাজ চলেছে।
ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রাম স্টেশনের ‘নেম বোর্ডে’ বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজির পাশাপাশি সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতেও স্টেশনের নাম লেখা হয়েছে। এই কৃতিত্বের দাবিদার ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম, এমনই প্রচার শুরু করল জেলা বিজেপি।
রবিবার ঝাড়গ্রাম স্টেশনে বিজেপির জেলা এসটি মোর্চা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে খোদ কুনারও দাবি করলেন, তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়েই রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল খড়্গপুর ও আদ্রা ডিভিশনের স্টেশনগুলির ‘নেম বোর্ডে’ সাঁওতালিতে স্টেশনের নাম লেখার বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়েছেন।
এ দিন সকালে ঝাড়গ্রাম স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে স্টেশন ম্যানেজার হরিলাল মুর্মুর হাতে রেলমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা ধন্যবাদপত্র তুলে দিয়ে কুনার বলেন, ‘‘সাঁওতালি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অর্ন্তভুক্ত। এই এলাকার ৬০ শতাংশ মানুষ সাঁওতাল ভাষায় কথা বলেন। খড়্গপুর ডিভিশন ও আদ্রা ডিভিশন এলাকার স্টেশনগুলিতে স্টেশনের নামও যাতে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে লেখা হয় সেজন্য রেলমন্ত্রীর কাছে আমি চিঠি দিয়ে আবেদন করেছিলাম।’’ সাংসদের দাবি, রেলমন্ত্রী তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে অনুমতি দেওয়ায় খড়্গপুর ও আদ্রা ডিভিশনে প্রায় একশোরও বেশি স্টেশনে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে স্টেশনে ‘নেম বোর্ড’ লেখার কাজ চলছে। তাই স্টেশন ম্যানেজারের মাধ্যমে রেলমন্ত্রীকে ধন্যবাদপত্র পাঠানো হল।
সেই সঙ্গে সাংসদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকায় শিক্ষা, পানীয় জল-সহ আদিবাসী উন্নয়নের অনেক দাবি এখনও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালে রাজ্যে বিজেপির সরকার এলে ওই সব বকেয়া উন্নয়ন কাজ সেরে ফেলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেন কুনার।
জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে জনজাতি ভোটের ভূমিকা রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট ও ২০১৯-র লোকসভা ভোটে জনজাতিদের একাংশ শাসকদল তৃণমূলকে বিমুখ করার জন্যেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তে পদ্মফুল ফুটেছে। গত বছর লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন কুনার। সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’ এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একপক্ষ নিজেদের চিরাচরিত সমাজের উত্তরসূরি হিসেবে দাবি করছেন। আর একপক্ষ রয়েছেন তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য সভাপতি রবিন টুডুর সঙ্গে। এমন আবহে কুনারের এই কর্মসূচি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সাংসদকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য সভাপতি রবিন টুডুর পাল্টা, ‘‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পক্ষ থেকে বহু বছর ধরে জঙ্গলমহলের রেল স্টেশনের নেম রোর্ড সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে লেখার দাবি করা হয়েছে। সাংসদ এখন ভোটের আগে নেম বোর্ড নিয়েও স্টেশনে গিয়ে রাজনীতি করছেন।’’
সেই সঙ্গে রবিনের কটাক্ষ, লোকসভা ভোটের প্রচারে গোপীবল্লভপুর-ওড়িশা এবং ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া নতুন রেলপথের আশ্বাস দিয়েছিল বিজেপি। সে সবের কিছুই হয়নি। উল্টে সরডিহা স্টেশন থেকে স্টিল এক্সপ্রেসের স্টপেজ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এখনও টাটা-খড়্গপুর শাখায় লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
কুনার অবশ্য জানাচ্ছেন, এই শাখায় লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য এবং সরডিহায় স্টিলের স্টপেজ চালুর বিষয়ে তিনি রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। দাবিপূরণের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। নতুন রেলপথের জন্য রাজ্য সরকার জমির সংস্থান করেনি বলেও পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিজেপি সাংসদ।