বিশ্ব এড্স দিবসের আগে বুধবার মেদিনীপুর ডিএভি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
বিগত ১২ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১০ সালে জেলায় এইচআইভি সংক্রমিত ছিলেন ৬৫২ জন। ২০২২ সালে সেই সংখ্যাটা ২,৮১৪!
উদ্বেগের এই চিত্রটা পশ্চিম মেদিনীপুরের। তুলনামূলক ভাবে কমবয়সিদের মধ্যেও এইচআইভি সংক্রমণ বেড়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। আর এতেই বেড়েছে উদ্বেগ। তবে জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের অবশ্য মত, পরীক্ষা হচ্ছে অনেক বেশি, তাই নতুন সংক্রমিতরা চিহ্নিতও হচ্ছেন। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, এইচআইভি সংক্রমিতদের চিহ্নিত করা না গেলে পরবর্তী সময়ে সংক্রমিতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘এইচআইভি প্রতিরোধে সংহতি গড়ে তুলতে হবে।’’ যদিও তাঁর দাবি, ‘‘এইচআইভি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা এখন অনেকই বেড়েছে। পরীক্ষা বেড়েছে। জেলার যে সকল জায়গাগুলি ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত, সেখানে এইচআইভি পরীক্ষা শিবির হচ্ছে।’’ আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্ব এডস দিবস। দিনটি পালিত হবে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। একাধিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি হওয়ার কথা রয়েছে জেলায়। দিনটি পালনে এ বারের স্লোগান, ‘রক্ষিত হোক সমতা’। সঙ্গে বার্তা, ‘রক্ত পরীক্ষা করুন। নিজের এইচআইভি আছে কি না জানুন।’ জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা মনে করাচ্ছেন, ‘‘এইচআইভি মুক্ত জীবন, প্রতিটি সদ্যোজাত শিশুর অধিকার। সরকারি হাসপাতালে প্রসব করান, সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা করান, সদ্যোজাত শিশুর সংক্রমণ রোধে সচেষ্ট হন।’’ প্রচারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ, গর্ভাবস্থায় অন্তত একবার নিকটবর্তী আইসিটিসি-তে যোগাযোগ করুন।
জানা যাচ্ছে, গত কয়েক মাসেও পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন করে বেশ কয়েকজন এইচআইভি সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে। সংক্রমিতদের চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। জেলার পরিস্থিতি ঠিক কী এ ক্ষেত্রে? জানা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে জেলায় এইচআইভি পরীক্ষা হয়েছিল ৫৪,০৬১ জনের। এঁদের মধ্যে সংক্রমিত ছিলেন ২৩৭ জন। ২০১৯ সালে পরীক্ষা হয়েছিল ৫৫,৫১৬ জনের। সংক্রমিত ছিলেন ২৬৬ জন। ২০২০ সালে পরীক্ষা হয়েছিল ৩৫,৩৮৩ জনের। সংক্রমিত ছিলেন ১৩১ জন। ২০২১ সালে পরীক্ষা হয়েছিল ৩৩,০১১ জনের। সংক্রমিত ছিলেন ১২৮ জন। আর ২০২২ সালে অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩৮,০৬৫ জনের। এঁদের মধ্যে সংক্রমিত ছিলেন ১৩৯ জন। জেলায় এখন মোট এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা ২,৮১৪। বেশিরভাগই চিকিৎসাধীন। সংক্রমিতদের মধ্যে পুরুষ ১,৪১২ জন, মহিলা ১,৪০২ জন। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় মোট এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ২,২২১। এর মধ্যে পুরুষ ১,২১২, মহিলা ১,০০৯। সংক্রমিতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঘাটাল মহকুমায়। আর এলাকার নিরিখে দাসপুরে। প্রসঙ্গত, এখানে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।
সংক্রমিতের সংখ্যায় রাশ নেই কেন? জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, ‘‘আগের তুলনায় এইচআইভি শনাক্তকরণে শিবিরের সংখ্যা বেড়েছে এখন। প্রত্যন্ত এলাকাতেও শিবির হচ্ছে। নতুন সংক্রমিতের খোঁজ মিলছে। এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেকটা বেড়েছে। অনেকে নিজেই পরীক্ষা করাতে এগিয়ে আসছেন। এটা ভাল দিক।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘এইচআইভি নিয়ে নানা সচেতনতা কর্মসূচি চলে। সাধারণ মানুষকে যত বেশি এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করা যাবে, ততই সংক্রমণ কমবে।’’ এইচআইভি পরীক্ষায় জনবহুল এলাকায় শিবির হবে। শিবির হওয়ার কথা মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ড, খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ড, ঘাটাল বাসস্ট্যান্ড, দাসপুর বাসস্ট্যান্ড প্রভৃতি এলাকায়।