নাতনির সঙ্গে শিশিরবাবু। ফাইল চিত্র।
পুরসভা কিংবা পঞ্চায়েত, বিধানসভা কিংবা লোকসভা যে কোনও নির্বাচনেই তাঁর ব্যস্ততার শেষ থাকত না। কর্মীদের মিটিং থেকে সভা, জনসংযোগে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না। বছরখানেক আগে বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে দু’ একবার প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে এবার পুরভোটের ময়দানে একেবারেই ঘরবন্দি তিনি। তিনি মানে শিশির অধিকারী। যিনি এখনও খাতায়-কলমে তৃণমূল সাংসদ।
‘শান্তিকুঞ্জ’র অভিভাবক শিশির অধিকারী এবং কাঁথি শহরের নাম কয়েক দশক ধরে সমার্থক। দীর্ঘদিন কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এবারও পুরভোট ঘোষণার আগে থেকেই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে শিশিরবাবুর নাম নিয়ে জল্পনা ছিল জেলাজুড়ে। কিন্তু পরে দেখা যায়, গোটা ‘শান্তিকুঞ্জ’ থেকেই এবার কেউ পুরভোটে প্রার্থী নন। ফলে পুরভোটের মরসুমে জেলার প্রবীণ রাজনীতিক কী করছেন, কোথায় আছেন সে সব নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। যদিও জল্পনা যাঁকে নিয়ে দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ তথা রাজ্যের অন্যতম প্রবীণ সাংসদ শিশির অধিকারী
অবশ্য চুপচাপই।
নিজের খাসতালুক কাঁথিতে পুরভোটের শেষবেলার প্রচারে শুক্রবার ব্যস্ত ছিলেন অধিকারী বাড়ির মেজো ছেলে তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেজো ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী নিজের সাংসদ অফিসে ব্যস্ত। একদিন পরেই পুরভোট। অথচ এ দিন বাড়িতে বসে খবরের কাগজে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের খবর খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পড়তে দেখা গেল বর্ষীয়ান সাংসদকে।
পুরভোটের মরসুমেও বাড়িতেই রয়েছেন! প্রশ্ন শুনে জবাব বর্ষীয়ান সাংসদের, ‘‘শরীরটা আগের তুলনায় অনেকটা ভাল। তবে পুরোপুরি সুস্থ হইনি বলে চিকিৎসকের পরামর্শে এখনও বাড়ি থেকে সেরকম বেরোতে পারি না।’’ নিজের হাতে তিলে তিলে গড়ে তোলা কাঁথি পুরসভা অথচ সেখানকারই পুরভোটে আপনি নিষ্ক্রিয় কেন? ফের সাংসদের উত্তর, ‘‘ছেলেরা তো ময়দানে লড়ছে। আমি বাড়িতে বসে দেখছি।’’ তবে পরিবারের কেউ প্রার্থী হয়নি বলেই কি পুরভোটে তিনি নিষ্ক্রিয়! অভিযোগ মানতে নারাজ শিশির। তাঁর দাবি, ‘‘এটা নিয়ে আমাদের পারিবারিক কোনও আবেগ নেই। পক্ষে-বিপক্ষে সকলেই তো কাঁথির ছেল। উপযুক্ত প্রার্থীদের জেতানোর জন্য ছেলেরা
ময়দানে নেমেছে।’’
বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের সাংসদকে। পুরভোটেও নাকি বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে গোপনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছেন। কোথাও ফোনে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন বলে ইতিমধ্যেই তৃণমুলের তরফে অভিযোগ উঠছে। প্রসঙ্গ উঠতেই হাসিমুখে শিশিরের মন্তব্য, ‘‘ওরা সবেতেই আমার ছায়া দেখতে পাচ্ছে। আমার এবং আমার গোটা পরিবারের জীবনযাপনকে দেখিয়ে কুরুচিকর গালমন্দ করা হচ্ছে। এ ধরনের কথা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কাছে শুনিনি।’’ এই নিয়ে যে তাঁর ক্ষোভ রয়েছে তাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন সাংসদ।