প্রতীকী ছবি
আমপানে বিস্তর ক্ষতি হয়েছে উপকূলের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে। ঘরবাড়ি ভেঙেছে, উপড়েছে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি, তছনছ পান বরজ। ক্ষতিগ্রস্তদের ইতিমধ্যে অর্থ সাহায্য দেওয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে উঠতে শুরু করেছে স্বজনপোষণ ও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করার অভিযোগ।
পরিস্থিতি দেখে কড়া হল প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় যাঁদের নাম থাকা নিয়ে অভিযোগ উঠছে তাঁদের সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল জেলা প্রশাসন। সোমবার জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় যাঁদের নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।’’
ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণে ২০ হাজার টাকা ও একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ৯০ টি শ্রম দিবস বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যের ব্যাঙ্ক আকাউন্টে ওই টাকা দেওয়ার কথা। গত ২০ মে আমপানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে বিডিওদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের তালিকা চূড়ান্ত করতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ার নির্দেশিকাও রয়েছে। তারপরেও উঠছিল অন্যায় ভাবে ‘পাইয়ে দেওয়া’র অভিযোগ। তার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের এই নির্দেশ ঘিরে আলোড়ন পড়েছে।
ইতিমধ্যে পাঁশকুড়া ব্লকের রঘুনাথবাড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধানের আত্মীয় ও শাসকদলের ঘনিষ্ঠদের নাম ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকের তালিকায় থাকার অভিযোগ বিডিও-কে জমা দিয়েছেন পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের প্রতিমা দাস। বিডিও তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন। ওই পঞ্চায়েতের চার সদস্যের কমিটির প্রত্যেককেই জরুরি তলব করলেন পাঁশকুড়ার বিডিও ধেনধুপ ভুটিয়া। আজ, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় ওই চারজনকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করবেন বিডিও।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে রঘুনাথবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান অজিত কুমার সামন্তর দাবি, ‘‘আমি সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্য ও বিরোধী দলনেত্রীর পাঠানো তালিকা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আমার শাশুড়ির নাম তালিকায় তুলেছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু জানতাম না।’’
এ ছাড়া তমলুক ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। ব্লক প্রশাসনে বিজেপি অভিযোগ করেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একাংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন পরিবার তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার সরকারি আর্থিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সরকারি সাহায্য থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ইতিমধ্যে দলীয় ভাবে সতর্ক করেছেন। তালিকায় কোনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নাম না থাকলে সেই পরিবার যাতে বিডিও’র কাছে আবেদন জানান, সে কথাও জানানো হয়েছে।