প্রতীকী ছবি।
কুড়মিদের অবস্থান উঠল। তবে অস্বস্তি কমল না প্রশাসনের। এ বার দাবি আদায়ে সরব হলেন আদিবাসীরাও।
গত শুক্রবার ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের রবিন টুডু গোষ্ঠী ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের কাছের স্মারকলিপি দিয়েছে। সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠনটি এখন দ্বিধাবিভক্ত। তৃণমূল সংস্রবের অভিযোগে সংগঠনের সর্বোচ্চ সামাজিক প্রধান ‘দিশম পারগানা’ পদ থেকে নিত্যানন্দ হেমব্রমকে অপসারণের দাবি করেছেন পারগানা মহলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ। নিত্যানন্দের অবশ্য দাবি, তিনিই দিশম পারগানা পদে আছেন। নিত্যানন্দের নিয়োগ করা ‘পনত পারগানা’ (পশ্চিমঙ্গের সামাজিক প্রধান) রবিন টুডু এখন তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য সভাপতি। রবিনের স্ত্রী বিরবাহা সরেন ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান। রবিনের পাল্টা অভিযোগ, সামাজিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ বিজেপি-র ইন্ধনে তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। সূত্রের খবর, রবিন বিরোধী পারগানা মহলের একাংশ শীঘ্রই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরকার পক্ষের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। তার আগেই রবিন গোষ্ঠীর স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সূত্রের খবর, রবিন টুডু শাসকদলে থাকলেও তাঁদের নেতৃত্বাধীন পারগানা মহল যে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত, সেটা বোঝাতেই শুক্রবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। রবিন গোষ্ঠীর পারগানা মহলের অবিভক্ত ‘মেদিনীপুর জেলা পারগানা’ শুকদেব সরেন শুক্রবার ওই স্মারকলিপি দেন। সেখানে আদিবাসীদের সারি ধরমকে কোড-সহ স্বীকৃতি, সমস্ত পঞ্চায়েত ও সরকারি কার্যালয়ে এবং প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে নামের বোর্ড, ব্লক ও জেলা স্তরে পৃথক আদিবাসী উন্নয়ন দফতর, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের সুব্যবস্থা-সহ ১৪ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এর আগে এসটি তালিকাভুক্তি, কুড়মালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি-সহ ২৬ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল কুড়মিরা। গত সোমবার থেকে ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরের সামনে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিল কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ। বৃহস্পতিবার থেকে অনশনও শুরু হয়। রাজ্যের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে শুক্রবার শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধও হয়। তবে শনিবার রাজ্যের তরফে আলোচনার আশ্বাস পেয়ে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ। ওই মঞ্চের নেতা অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘আগামী ১৫ ডিসেম্বর রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছেন। সেই কারণে অবস্থান ও অনশন তোলা হয়েছে।’’
উমা সরেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ থাকাকালীন ২০১৮ সালের মার্চে জেনিভায় এক সম্মেলনে গিয়ে কুড়মিদের এসটি তালিকাভুক্তির দাবিতে সওয়াল করেছিলেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। তাই কুড়মিদের আদিবাসী স্বীকৃতি চেয়ে অবস্থানের মাঝে ওই আদিবাসীদের সংগঠনের স্মারকলিপির কর্মসূচির পিছনে সামাজিক কারণও দেখছেন কেউ কেউ। রবিন টুডু অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি রাজনৈতিক পদে থাকলেও সামাজিক সংগঠন সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি মুক্ত। আদিবাসীদের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী খুবই সহানুভূতিশীল। এখনও যে সব দাবি পূরণ হয়নি, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পারগানা মহলের জেলা নেতৃত্ব রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।’’