প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে মারার অভিযোগ। প্রতীকী চিত্র।
এলাকায় বেপরোয়া বাইক চালানো নিয়ে দুই যুবকের মধ্যে শুরু হয়েছিল বচসা। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইক আরোহী যুবকের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন স্থানীয় এক আদিবাসী শিক্ষক। এই ঘটনায় ওই আদিবাসী শিক্ষককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার রাতের এই ঘটনায় গুরুতর জখম ওই শিক্ষককে সেই রাতেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি, মঙ্গলবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালেই মারা যান ওই শিক্ষক। অন্য দিকে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে ধরেছে পুলিশ।
সোমবার রাতে ডেবরার শ্রীরামপুরের এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। এ দিনের ওই ঘটনায় আক্রান্ত হন স্থানীয় বাসিন্দা তথা শিক্ষক লক্ষ্মীরাম টুডু। চোট পেয়েছেন অপরপক্ষের দু’জনও। লক্ষ্মীরাম আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের নেতা বলে জানা গিয়েছে। খবর, ওই দিন লক্ষ্মীরামের বাড়ির সামনে বেপরোয়া দুই বাইক আরোহীকে ঘিরে বচসা চলছিল। সেই সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন লক্ষ্মীরাম। এরপরই ওই বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনিও। এর পরে বাইক আরোহী এক যুবকের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হতেই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ওই যুবকের সমর্থনে ব্লকের বাকলসা থেকে ছুটে আসেন আরও কয়েকজন। এর পরে অশান্তি বাড়তে থাকলে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তারপরই লক্ষ্মীরামকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
পাল্টা লক্ষ্মীরামের সমর্থনে আসা ওই বাকলসার কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তবে লক্ষ্মীরাম আদিবাসী নেতা হওয়ায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। গুরুতর জখম ওই শিক্ষককে প্রথমে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর লক্ষ্মীরামকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করা হয়। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবারের মারামারির ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয় ডেবরা থানায়। এরপর অভিযুক্তদের পাকড়াও করে গ্রেফতারের দাবি জানান আদিবাসীরা। রাতেই চাপের মুখে পড়ে অভিযুক্ত রবি ভুঁইয়া, অর্ক ভুঁইয়া ও সুমন ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সকলের বাড়ি বাকলসা গ্রামে। তবে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পাল্টা কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এ দিন সকালেও উত্তেজনা ছড়ায় ওই এলাকায়। অভিযুক্তদের বাড়ির সামনে জমায়েত করেন আদিবাসী সংগঠনের সমর্থকেরা। পরে অবশ্য পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ দিন বিষয়টি নিয়ে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের রাজ্য নেতা রবীন্দ্রনাথ মুর্মু বলেন, “লক্ষ্মীরাম টুডু আমাদের সংগঠনের নেতা। প্রাথমিকের শিক্ষক। বেপরোয়া বাইক চালানোয় প্রতিবাদ জানানোয় তাঁকে মারধর করা হয়। এর আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডেবরার ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করছি।’’ প্রসঙ্গত, এ দিন আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোচনায় জরুরি ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে ভার্চুয়াল বৈঠক ডাকা হয়।