জমায়েত: নয়াগ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় ও বেলপাহাড়ি ব্লকে শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে-ডাক্তার’ শিবির। তার মাঝেই কাল শনিবার থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে অনির্দিষ্টকালীন বন্ধের ডাক দিল ‘দিশম পারগানা’ বাদল কিস্কুর নেতৃত্বাধীন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবেও বন্ধের কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
আদিবাসী সংগঠনটি পোস্টার ও প্রচারপত্র ছড়িয়ে জানিয়েছে, সম্প্রতি বিধানসভায় রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের প্রতিবাদে এই বন্ধ। সংগঠনের জিলা পারগানা (জেলার প্রধান) ঢাঙ্গা হাঁসদা বলছেন, ‘‘মন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতেই আমারা বন্ধ ডেকেছি।’’ আচমকা বন্ধের ঘোষণায় দিশাহারা জেলাবাসী। কারণ, ‘দুয়ারে ডাক্তার’ ছাড়াও এখন বিয়ের মরসুম। পর্যটনেরও ভরা মরসুম। দোলের পরও পর্যটকরাও আসছেন। সপ্তাহান্তের বন্ধে তাই চিন্তিত সব মহলই।
ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলছেন, ‘‘পর্যটনকে কেন্দ্র করে জেলায় বহু মানুষের রুজি চলে। টানা বন্ধ হলে পর্যটনের সঙ্গে যুক্তরা ভীষণই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পর্যটকদের গাড়িকেও ছাড় দেওয়া উচিত।’’ আদিবাসী সংগঠনটির নেতৃত্বরা অবশ্য জানিয়েছেন, বনধে দোকান-বাজার-যানবাহন বন্ধ থাকবে। কোথাও রাস্তা অবরোধ করা হবে না। তবে সংগঠনের সদস্যরা পথে নেমে মিছিল করবেন। ঢাঙ্গার কথায়, ‘‘বিয়েবাড়ির গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স, রোগীদের গাড়ি, পুলিশ-প্রশাসন ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি বন্ধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের গাড়ির ছাড় নেই।’’
এ দিকে, শুক্র-শনি দু’দিন ধরে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল ও লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘দুয়ারে-ডাক্তার’ শিবির হবে। এসএসকেএম-সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসবেন। সংশ্লিষ্ট ব্লকের আশাকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ইতিমধ্যে রোগীর তালিকা তৈরি করেছেন। এ ছাড়াও প্রথমার্ধে যাঁরা আসবেন, তাঁরাও চিকিৎসককে দেখানোর জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। তবে বন্ধে দ্বিতীয় দিনের শিবিরে সমস্যার আশঙ্কা থাকছে।
‘দিশম পারগানা’ নিত্যানন্দ হেমব্রমের নেতৃত্বাধীন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ‘পনত পারগানা’ (রাজ্যের প্রধান) রবিন টুডু বলছেন, ‘‘আমাদের সংগঠনটিই প্রকৃতপক্ষে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। জেগেৎ জাকাত মাঝি পারগানা মহলের লোকজন আমাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বন্ধ ডেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রতিবাদ অন্যভাবেও করা যায়।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘বিধানসভায় মন্ত্রী শোভনদেববাবু বিরূপ কোনও মন্তব্য করেননি। বিরোধী দলগুলি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হইচই করছিল। পুরো বিষয়টি না বুঝে বন্ধ ডেকে মানুষের সমস্যা বাড়ানো অনুচিত।’’
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে বাদল গোষ্ঠী কলকাতায় আদিবাসীদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। রবিনরা আপত্তি তোলায় ‘জেগেৎ জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর নামে প্রশাসনের কাছে ওই কর্মসূচির অনুমতি নেন বাদলরা। ঢাঙ্গা বলছেন, ‘‘আমরা বিতর্ক চাইনি বলেই ওই নামে কর্মসূচির অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। যিনি এসব বলছেন তিনি রাজনৈতিক পদে আছেন। জনগণ বোঝেন, আদিবাসীদের কোন সংগঠন সামাজিক ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল আর কোনটা পারগানা মহলের নামে রাজনৈতিক সংগঠন।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুরও বক্তব্য, ‘‘আদিবাসী সামাজিক সংগঠন বন্ধ ডেকেছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। আর তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা কুকথা বলে ভুলে যাওয়ার ভান করেন।’’
বন্ধ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়ালের আশ্বাস, ‘‘আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।’’