আবু তাহের খান। — ফাইল চিত্র।
স্বামী এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা হিসাবে পরিচিত। কিন্তু ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় আপাতত খাতায় কলমে তিনি ‘পলাতক’। পঞ্চায়েতে ভোটে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে প্রতীক না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত মননোয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন পর্বের তথা তৃণমূলের নেতা আবু তাহেরের স্ত্রীকে। যার জেরে এবারে পঞ্চায়েত ভোটে কার্যত মুছে গেল নন্দীগ্রামের দুই দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান এবং আবু তাহেরের নাম।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, তাহেরের স্ত্রী আনিসা খাতুন নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের কেন্দামারি জলপাই অঞ্চলের একটি বুথে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন। ওই একই বুথ থেকে পরে আরও একজন মহিলা প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। শেষ পর্যন্ত তাহেরের স্ত্রীকে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। প্রতীক না মেলায় আনিসা নন্দীগ্রাম-১ ব্লক অফিসে নিজে গিয়ে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নেন। এ ব্যাপারে আনিসা বলেন, ‘‘দলের একাধিক নেতৃত্বর কথা অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু দলীয় প্রতীক অন্য জনকে দেওয়া হয়েছে। তাই নিয়ম মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’’ তাহেরের ছেলে ওয়াসিম আহমেদ বলছেন, ‘‘দলীয় সিদ্ধান্তের উপরে কোনও মন্তব্য করব না।’’
আবু তাহের ২০০৮ সাল থেকে পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে। একাধিকবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতি দায়িত্ব সামলেছেন। গত বিধানসভা ভোটে দেবব্রত মাইতি নামে এক বিজেপি কর্মী খুনের মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে যায়। আদালতে তাহেরের আগাম জামিনের নির্দেশ খারিজ হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি। তাঁর স্ত্রী প্রার্থী না হওয়ায় দেড় দশকের পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে তাহের ‘শাসনে’র এবার ইতি পড়ল।
একই অবস্থা জমি আন্দোলনের নেতা তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ সভাধিপতি শেখ সুফিয়ানকে প্রথমে জেলা পরিষদের প্রার্থী করা হয়। পরে তাঁকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সরিয়ে দেন।সুফিয়ান ১৯৮৮ সাল থেকে সিপিএমের টিকিটে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। পরে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হিসাবে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করে আসছেন। এবারের ভোট প্রচারে সুফিয়ান বা তাহে— কারও নামই আর শুনতে পাবেন না নন্দীগ্রামবাসী। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন বলছেন, "আবু তাহের বা তাঁর স্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার কোনও কথাই ছিল না। তিনি কেন দলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, বলতে পারব না।"
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলছেন, ‘‘দুজনেই জমি আন্দোলনের সময় থেকে মাটি কামড়ে লড়াই করেছেন। দুজনেরই যথেষ্ট সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। তারপরেও কেন তাঁদের প্রার্থী করেনি সেটা তৃণমূলের নেতৃত্বরা বলতে পারবেন।’’