এই বাড়িতেই থাকতেন কমলা সন্নিগ্রাহী। —নিজস্ব চিত্র
ছিটেবেড়া দেওয়া দেওয়াল। ছাউনি অ্যাসবেস্টসের। বাড়ির সামনে ঝুলছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির বড় ফ্লেক্স। বাড়ির মালিক পাঁশকুড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান কমলা সান্নিগ্রাহী। কমলা ও তাঁর স্বামী তৃণমূল নেতা নবীন সন্নিগ্রাহী সৎ ও নিষ্ঠাবান দলীয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। তবুও পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরও দলীয় নির্দেশে প্রত্যাহার করতে হয়েছে কমলাকে। তাতে প্রশ্ন উঠছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সৎ মুখ’ প্রার্থী খোঁজের নিদান নিয়ে।
পাঁশকুড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নস্করদিঘি গ্রামের নবীন তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে। বর্তমানে তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ২০০৩ সাল থেকে রাজনীতি করছেন নবীনের স্ত্রী কমলা। তিনি বর্তমানে পাঁশকুড়া ১ মহিলা তৃণমূল কমিটির সভানেত্রী। চাষবাস করে সংসার চলে। একমাত্র মেয়ে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূলের ঝড় উঠলেও পাঁশকুড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলেই ছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হয়। প্রধান হন কমলা। শাসক দল নেতা, জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার। অনেকের সম্পত্তি নিয়ে চর্চা হয়। এমন পরিস্থিতিতে কমলার ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি। কমলার দাবি, তৃণমূল করার জন্য তৎকালীন সিপিএমের পঞ্চায়েত বোর্ড আবাস তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেয়। পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর নিজের বাড়ির জন্য চেষ্টাই করেননি।
এবার পঞ্চায়েতের একটি আসনে মনোনয়ন জমা দেন কমলা। ওই আসনে তৃণমূলের আরেকজনও মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দলীয় নেতৃত্ব কমলাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। স্ত্রীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর নির্বাচনে সহযোগিতা না করার কথা জানিয়ে দলকে চিঠি দিয়েছেন নবীন। তিনি বলেন, ‘‘দলীয় বৈঠক অনুযায়ী নব জোয়ার কর্মসূচির ভোটদানে আমার স্ত্রীকে প্রার্থী করার জন্য সকলেই ভোট দিয়েছিলেন। পাঁচ বছর পঞ্চায়েত চালিয়েও আমার স্ত্রী নিজের নামে আবাস যোজনা পাননি। দলের নির্দেশেই আমার স্ত্রী পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল। দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহারও করে নিয়েছে। এই নির্বাচনের সমস্ত কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলাম।’’
কেন এরকম হল? নবীনের দাবি তাঁরা তৃণমূল নেতা নন্দকুমার মিশ্রের অনুগামী। তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে নন্দবাবুর কোন্দলের জেরেই তাঁদের টিকিট দেওয়া হয়নি। যদিও তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি সুজিত রায় বলেন, ‘‘দল কমলা সন্নিগ্রাহীকে প্রথমে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে টিকিট দিয়েছিল। উনি রাজি না হওয়ায় পঞ্চায়েতে মনোনয়ন করেন। রাজ্য নেতৃত্ব ওঁকে প্রতীক দেয়নি। উনি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একজন নেত্রী। ওঁদের সকলকে সঙ্গে নিয়েই ভোটে লড়ব।’’