অভিষেকের কর্মসূচির জন্য যান চলাচল বন্ধ। নিজস্ব চিত্র
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটে। রোদ তখনও চড়া। মোবাইল বলছে চণ্ডীপুর বাজারে তাপমাত্রা তখন ৪১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
সেই অস্বস্তিকর গরমে গলদঘর্ম হয়েই চণ্ডীপুর ফুটবল ময়দান থেকে নন্দীগ্রাম দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার পদযাত্রা শুরু করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে চণ্ডীপুরের বিধায়ক অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী, ব্লক সভাপতি স্নেহাংশু পণ্ডিত-সহ স্থানীয় নেতৃত্ব। হেঁটেই গোটা রাস্তা পেরিয়েছেন অভিষেক। আধ কিলোমিটার দূরে নন্দকুমার-দিঘা জাতীয় সড়ক ও চণ্ডীপুর-নন্দীগ্রাম রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে ক্ষুদিরামের মূর্তিতে মাল্যদান করে নন্দীগ্রাম রওনা দেন। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কখনও রাস্তার পাশে জনতার সঙ্গে হাত মেলালেন, কখনও হাত নাড়লেন হাসিমুখে।
এড়াশাল ও ফুলনি মোড়, নন্দপুর পেরিয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ হাঁসচড়া বাজারে পোঁছন অভিষেক। চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে সারেন জনসংযোগ। চা দোকানি সুভাষ মাইতি ও তাঁর স্ত্রী শ্রাবন্তী রাস্তাঘাট, পানীয় জল, লোডশেডিংয়ের সমস্যা জানান। অভিষেক তা সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে চা দোকানি সুভাষ বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ বছরের পুরনো দোকান। আগে কোনওদিন এমন ভিআইপি দোকানে বসে চা খাননি।’’ ক’দিন আগে চণ্ডীপুর বাজারের কাছে জাতীয় সড়কে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায় মৃত শেখ ইসরাফিলের পরিবারের সঙ্গেও হাঁসচড়া বাজারেই দেখা করেছেন অভিষেক।
অভিষেকের পদযাত্রার জন্য বেলা ১২টাতেই চণ্ডীপুর বাজার থেকে নন্দীগ্রামগামী সড়কে বাস, গাড়ি-সহ ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। নন্দকুমার-দিঘা ১১৬ বি জাতীয় সড়কে চণ্ডীপুরের নরঘাট মাতঙ্গিনী সেতুর কাছ থেকে চণ্ডীপুর বাজার পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার রাস্তাতেও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তার জেরে তীব্র যানজট শুরু হয়। দুর্ভোগের শিকার হন ব্যস্ত দুই সড়কে যাতায়াতকারী বহু মানুষ। পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও অন্য জেলা থেকে আসা কর্মী-সমর্থক বোঝাই সরকারি-বেসরকারি বাস দিঘাগামী জাতীয় সড়কের বেশিরভাগ দখল করে দাঁড়িয়ে থাকায় দুর্ভোগ বাড়ে। নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার বাসিন্দা শিবময় দাসের অভিযোগ,‘‘দুপুরে নিমতৌড়ি যাব বলে বেরিয়ে দেখি বাস বন্ধ। খুবই হয়রানি হয়েছে।’’
চণ্ডীপুরের বিজেপি নেতা তথা তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি পুলককান্তি গুড়িয়ার অভিযোগ, ’’অভিষেকের পদযাত্রায় চণ্ডীপুরের মানুষের সাড়া মেলেনি। বাইরের লোকজন এনে রাস্তা বন্ধ করে মানুষকে হয়রান করা হয়েছে।’’ চণ্ডীপুরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহাংশুর অবশ্য দাবি, ’’পদযাত্রা শুরুর কিছুটা আগে চণ্ডীপুর-নন্দীগ্রাম রাজ্য সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। খুব অসুবিধা হয়নি।’’
সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ নন্দীগ্রামের মাটি ছোঁন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের গোপালপুর ক্ষুদিরাম মোড়ে রাস্তার দু'পাশে তখন উপচে পড়া ভিড়। ব্যারিকেডের ওপার থেকে আওয়াজ উঠল, ‘অভিষেক, অভিষেক’। ডান হাত নেড়ে সাড়া দেন তিনি। তারপর ফের হাঁটা শুরু। ক্ষুদিরাম মোড় হয়ে রেয়াপাড়া, তারপর চৌমুখি, টেঙ্গুয়া, সীতানন্দ কলেজ। অভিষেকের নিরাপত্তায় পুলিশের বিশাল বাহিনী ছাড়াও প্রতিটি মোড়ে ছিল পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ারের দল। দুই নন্দীগ্রামের বিডিওরাও গলদঘর্ম হয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। পথে প্ল্যাকার্ড হাতে নিজেদের দাবি জানান ভিলেজ রিসোর্স পার্সনরা।
গোটা পথ আলোকিত রাখতে তৎপরতা ছিল বিদ্যুৎ কর্মীদের। বিকল পথবাতি সারানো হয়েছে। যেখানে পথবাতি ছিল না, সেখানে এলইডি আলো লাগিয়ে জেনারেটর দিয়ে তা জ্বালানো হয়। গোটা পথেই ধরা পড়েছে উচ্ছ্বাস। প্রচণ্ড গরম সয়েও কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন অনেকে। অভিষেকও কখনও বৃদ্ধার সামনে নতমস্তক হয়ে, কখনও কিশোরকে বুকে টেনে সারেন জনসংযোগ। টেঙ্গুয়া মোড়ে ৬টি ধর্মের মানুষজন সংবর্ধনা দেন অভিষেককে। শুভেন্দু অধিকারীর নাম করেই স্লোগান তোলেন তিনি, ‘‘গদ্দার হটাও, মীরজাফর হটাও, নন্দীগ্রাম বাঁচাও।’’ ঝাড়গ্রামে এ দিন শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘চোর, ডাকাতদের নিয়ে কিছু বলব না। নন্দীগ্রামে বাইরে থেকে লোক আনা হয়েছে।’’