আইআইটির অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
গত বছর শিক্ষক দিবসে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছিলেন উচ্চশিক্ষায় প্রথম ‘জাতীয় শিক্ষক’ সম্মান। আইআইটির অধ্যাপক-গবেষক সুমন চক্রবর্তী তাঁর ‘ফ্লুইড মেকানিকস অ্যান্ড থার্মাল সায়েন্স’ নিয়ে গবেষণার জন্য দেশে বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর সম্মান’ও পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘ইনফোসিস পুরস্কার-২০২২’। এ বার এশিয়ার একশো বিজ্ঞানীর মধ্যেও জায়গা করে নিলেন সুমন।
সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনে’র অষ্টম সংস্করণ। ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর এশিয়ায় বিজ্ঞানে অসামান্য গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীদের কথা তুলে ধরা হয় এই পত্রিকায়। এ বার সেখানে ভারতের ১৭জন বিজ্ঞানীর কথা রয়েছে। সেই তালিকায় রাজ্য থেকে আছেন দু’জন— সুমন চক্রবর্তী এবং সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্ঘমিত্রা কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী। তিনি আগেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন।
ফ্লুইড মেকানিকস নিয়ে গবেষণা ও স্বাস্থ্যসেবায় স্বল্প খরচে নানা রোগ নির্ণয়ে সুমনের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি নজর কেড়েছে এই পত্রিকার প্রকাশকদের। সুমন নিজে বলছেন, “আমি ধারাবাহিকভাবে নানা গবেষণায় যুক্ত। গত কয়েক বছরে যে সম্মান পেয়েছি তাতে আরও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্ভুল পরীক্ষায় নানা প্রযুক্তির আবিষ্কার করেছি ও করছি। সে সব বিভিন্ন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। মনে হয় নানা সমীক্ষার পরেই এশিয়ার এই সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিন আমাকে বেছেছে। এই সম্মান নিঃসন্দেহে কাজে আরও উৎসাহ জোগাবে।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুমন ২০০২সালে খড়্গপুর আইআইটিতে অধ্যাপক হয়ে আসেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমনের মূল বিষয় ‘ফ্লুইড মেকানিকস অ্যান্ড থার্মাল সায়েন্স’। এক দশকেরও বেশি এই বিষয়ে নানা গবেষণা করছেন তিনি। ডায়াগনস্টিক, সেন্সিং ও থেরাপিউটিকসের জগতে বহু চিকিৎসা পরিষেবার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। করোনার সময়ে ভাইরোলজিস্ট অরিন্দম মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন স্বল্পমূল্যে করোনা পরীক্ষার যন্ত্র ‘কোভির্যাপ’। রক্তাল্পতা নির্ণয়ে তৈরি করেছেন ‘হিমো অ্যাপ’। মহিলারা যাতে গোপনীয়তা বজায় রেখে যোনিপথের সংক্রমণের পরীক্ষা বাড়িতেই স্বল্প খরচে করতে পারেন, সেই গবেষণাতেও সাফল্য পেয়েছেন সুমন।
এর আগে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে ‘আজাদি কি অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে দেশের ৭৫জন সেরা বিজ্ঞানীর মধ্যে আইআইটির এই অধ্যাপকও সম্মানিত হয়েছিলেন। এ বার চিন, মালয়েশিয়া, ফিলিপিনস, শ্রীলঙ্কা, জাপান, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়ার মতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ১০০জনের মধ্যে সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনে সুমনের নাম থাকায় সাড়া ফেলেছে আইআইটিতে। সুমন জানালেন, প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীই তাঁকে প্রথম খবরটা দিয়েছেন। যদিও এই বিষয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ফোন কেটে দিয়েছেন রেজিস্ট্রার অমিত জৈন। জবাব দেননি এসএমএসেরও।