প্রতীকী ছবি।
সুদীর্ঘ করোনাকালে মিড-ডে মিলের প্যাকেটবন্দি চাল-আলু-চিনি দেওয়া হত অভিভাবকদের হাতে। প্রায় দেড় বছর পরে আবার রান্না করা খাবার বিতরণের সিদ্ধান্তে পড়ুয়ারা বেজায় খুশি। সেই সঙ্গে খুশি অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃহস্পতিবারের ঘোষণা অনুযায়ী পাড়ায় শিক্ষালয়েও দুপুরে রান্না করা খাবার পাবে পড়ুয়ারা। তাঁর ঘোষণার পরেই শিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, পাড়ায় শিক্ষালয়ে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে সপ্তম এবং স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের আগের মতো রান্না করা মিড-ডে মিল দেওয়া হবে।
বীরভূমের লাভপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলের শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামের দিকে বহু গরিব পড়ুয়ার মা-বাবা সকালে উঠেই কাজে বেরিয়ে যান। অনেক পড়ুয়ার ভাল করে দুপুরের খাবারও জোটে না। রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা হওয়ায় ওদের আর দুপুরের খাবারের কথা চিন্তা করতে হবে না।” ওই শিক্ষিকা জানান, যারা রান্না করবে, সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি, সোমবার থেকেই শুরু হবে খাবার পরিবেশন।
মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের একটি গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের পাড়ায় শিক্ষালয় হবে স্কুলেরই মাঠে। প্রত্যেক পড়ুয়ার থালা স্কুলেই থাকে। তবে এই পরিস্থিতিতে বাড়ি থেকে থালা আনতে হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রনীল প্রধান জানান, প্রতিদিন গরম ভাত, ডাল, সয়াবিনের তরকারি এবং সপ্তাহে দু’দিন ডিমের ঝোল থাকবে। মাঝেমধ্যে ডালের সঙ্গে আলুর চোখাও দেওয়া হবে। স্কুলের লাগোয়া সাইক্লোন সেন্টারের চাতালে শুরু হচ্ছে পাড়ায় শিক্ষালয়। স্কুল-চত্বরে খাওয়ার ঘর বড়। খাওয়ার ব্যবস্থা হবে সেখানেই। পড়ুয়ারা স্কুলের শৌচালয়ই ব্যবহার করবে।
তবে পাড়ায় শিক্ষালয়ে রোজ কত পড়ুয়ার জন্য রান্না করা হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন কিছু শিক্ষক। অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দনকুমার মাইতি বলেন, “পাড়ায় শিক্ষালয়ে একই পাড়ার বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা আসতে পারে। তাই ঠিক কত পড়ুয়ার জন্য রান্না করতে হবে, তা বোঝা যাবে কী ভাবে? স্কুল থেকে দূরে পাড়ায় শিক্ষালয় হলে সেখানে রান্না করা খাবারই বা কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হবে?”
শিক্ষা দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, স্কুল থেকে খুব দূরে পাড়ায় শিক্ষালয় হবে না। ফলে রান্না করা খাবার নিয়ে যেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া পাড়ার শিক্ষালয়ে এক দিনে সব ক্লাসের পড়ুয়ারা আসবে না। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে একটি শ্রেণি আসবে। বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টের সময় ক্লাস করবে অন্য শ্রেণি। ফলে পড়ুয়ার সংখ্যা কখনওই খুব বেশি হবে না। তাই উপস্থিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দেখে নিয়ে সেই অনুযায়ী মিড-ডে মিল রান্না করতে অসুবিধা হবে না।