নব গঠিত রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলী থেকে অনেক পুরনো নেতা বাদ পড়েছেন। ফাইল চিত্র।
দলের অন্দরের ক্ষোভ প্রশমনে ‘পদহীন’দের রাজ্য কর্মসমিতিতে ঠাঁই দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু তাতে ক্ষোভ মিটল না। একদা যাঁরা ছিলেন রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সম্পাদক, রাজ্য কর্মসমিতির সাধারণ সদস্য হওয়াকে তাঁরা ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ হিসাবেও দেখছেন না। বরং, তাঁদের মতে, এই রাজ্য কর্মসমিতি হয়েছে ‘উচ্ছেদ হওয়াদের পুনর্বাসন কেন্দ্র’।
সুকান্ত মজুমদার বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে নব গঠিত রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলী থেকে অনেক পুরনো নেতা বাদ পড়ায় দলের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়। রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলী থেকে জেলা সভাপতিদের তালিকা পর্যন্ত কোথাও মতুয়া মুখ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর-সহ কয়েক জন দলীয় বিধায়কও। এই আবহে বিজেপির রাজ্য স্তরের দুই নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে পদ থেকে সরানোর দাবি প্রকাশ্যেই তোলেন শান্তনু। অমিতাভর অনুগামী রাজ্যের আর এক নেতা হঠাৎ ক্ষমতা পেয়ে তার অপব্যবহার করছেন বলেও দলের অন্দরে অভিযোগ ওঠে। অমিতাভকে পদ থেকে সরানোর জন্য রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারা গত কয়েক মাসে নিজেদের মধ্যে অনেক বৈঠক করেছেন। প্রথম যে বৈঠকটির কথা প্রকাশ্যে এসেছিল, সেটি হয়েছিল জয়প্রকাশ মজুমদারের বাড়িতে। সেই জয়প্রকাশ এখন তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি। তার পরের বৈঠক হয় প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। যদিও তার কিছু দিন পর থেকে প্রতাপকে আর বিক্ষুব্ধ শিবিরে দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সুকান্ত সোমবার দলের রাজ্য কর্মসমিতির ১০৮ জন সদস্য এবং ৪৮ জন বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যের তালিকা প্রকাশ করেছেন। সেখানে প্রতাপ, বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, রাজকমল পাঠক, শমীক ভট্টাচার্য, মীনাদেবী পুরোহিত, বিজয় ওঝা, দুধকুমার মণ্ডল, দুলাল বর প্রমুখকে সাধারণ সদস্য করে ক্ষোভ সামলানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর ওই কর্মসমিতিতেও ঠাঁই হয়নি। সায়ন্তন অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর আগের রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলীতে সহ সভাপতি থাকা রাজকমল বলেন, “এতে খুশি বা অখুশি— কোনও প্রতিক্রিয়াই হয় না।”
প্রতাপ, বিশ্বপ্রিয়, রাজকমল এর আগে দলের রাজ্য সহ সভাপতি ছিলেন। শমীক এক সময় ছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। এই রকম আরও অনেকেই রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতিতে এসেছেন, যাঁদের আগে পদাধিকার ছিল, এখন নেই। রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরের এক নেতার কথায়, “আমাদের দলে পদাধিকারীমণ্ডলীর গুরুত্ব আছে। কারণ তারাই দলের রণনীতি, রণকৌশল ঠিক করে। রাজ্য কর্মসমিতির সাধারণ সদস্যের সেই অধিকার বা গুরুত্ব কোনওটাই নেই। তিন মাস অন্তর একটা বৈঠকে ডাক পাওয়া এবং সেখানে গিয়ে শ্রোতার আসনে বসে নেতাদের ভাষণ শুনে ভাত খেয়ে বাড়ি চলে আসা— এই তো কাজ! এই করতে সকলে যাবেন নাকি!”
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক অবশ্য দাবি করেন, “কে বাদ গিয়েছেন, কে নতুন ঢুকেছেন, আমার জানা নেই। আমি ৩০-৩৫ বছর আগে কবে প্রথম রাজ্য কমিটিতে এসেছিলাম, সেই তারিখটা ভুলে গিয়েছি। কবে বাদ পড়েছিলাম, তা-ও মনে নেই। দল একটা বহমানতা। এত বড় গণতান্ত্রিক দল। বহু নতুন মানুষ এসেছেন। দু’-একটি বিচ্যুতি আছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”