নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ালেন বাংলার বিদ্বজ্জনেরা। — ফাইল ছবি।
জমি বিতর্কে এ বার নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ালেন বাংলার বিদ্বজ্জনেরা। তাঁদের তরফে আগামী বৃহস্পতিবার নন্দনে একটি বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে জমি বিতর্কে নিজেদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে বিদ্বজ্জনেদের।
এই নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সেখানে নাম রয়েছে সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী এবং অচিন চক্রবর্তীর। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিস দিয়েছেন বর্তমান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, অধ্যাপক সেনকে এই ধরনের নোটিস দেওয়া লজ্জাজনক। এই ধরনের প্রচেষ্টাকে ধিক্কার জানানো উচিত।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই কারণেই কয়েক জনকে নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে, যাঁরা আগেও বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে সরব হয়েছেন। এ বার অমর্ত্যকে ‘হেনস্থা’র বিষয়েও তাঁরা নিজেদের মত জানাবেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় নন্দনের ৩ নম্বর প্রেক্ষাগৃহে এই বৈঠক হবে।
নোবেলজয়ীকে জমি খালি করার বিষয়ে অন্তিম সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। গত ২০ এপ্রিল জানানো হয়েছিল, পরের ১৫ দিনের মধ্যে জমি খালি করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জমি খালি করা না হলে বলপ্রয়োগেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিশ্বভারতীর তরফে।
গত বুধবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবনে জমি বিতর্কের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে দিন অমর্ত্য বা তাঁর আইনজীবী গোঁরাচাদ চক্রবর্তী কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তাই অমর্ত্যের বিরুদ্ধে কড়া সিদ্ধান্ত নেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অমর্ত্যকে পাঠানো চিঠিতে তাঁরা জানিয়েছেন, অনুমোদিত দখলদার উচ্ছেদ আইন ১৯৭১ ধারা ৫-এর উপধারা ১-এর অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফেরানো হবে বিতর্কিত ১৩ ডেসিমেল জমি। ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ৬ই মে-র মধ্যে বিশ্বভারতীর প্লট নম্বর ২০১ উত্তর-পশ্চিম কোণে অর্থাৎ এল আর প্লট নাম্বার ১৯০০/২৪৮৭ সুরুল মৌজার ১৯০০ জেএল নম্বর ১০৪ পাবলিক সম্পত্তির উপর অনুমোদিত দখল জমি খালি করা নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কর্মসচিব ও এস্টেট অফিসার। ওই সময়সীমার মধ্যে জমি খালি করা না হলে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারির পাশাপাশি প্রয়োজনে বল প্রয়োগের মাধ্যমেও খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতীর জয়েন্ট রেজিস্ট্রার এবং এস্টেট অফিসারকে চিঠি দিয়ে অমর্ত্য লিখেছিলেন, “পারিবারিক ভিটে জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। এ নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই।” তিনি ওই চিঠিতে আরও লিখেছিলেন, ‘‘শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ বাড়ি যা ১৯৪৩ সাল থেকে আমার পরিবারের দখলে এবং আমি নিয়মিত ব্যবহার করে আসছি। পারিবারিক ভিটে জমির ধারক আমি এবং এটি হস্তান্তর করা হয়েছিল। আমার বাবা আশুতোষ সেন এবং মা অমৃতা সেনের মৃত্যুর পরও দীর্ঘ ৮০ বছর জমির ব্যবহার একই রয়ে গিয়েছে। জমি ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ এই জমির অধিকার দাবি করতে পারে না। প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট।’’ সেই বিষয়টি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিয়ে চিঠিতে জানান, কোনও হস্তক্ষেপ বা শান্তিভঙ্গের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। এর পরেও যদি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মানতে রাজি না হন তা হলে আমি জুন মাসে শান্তিনিকেতন ফিরে এলে আলোচনা হতে পারে।’’ এই লিখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ১৭ এপ্রিল চিঠি পাঠান নোবেলজয়ী। চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার জন্য ৩ মাস সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৩ মাসের বদলে জমি উচ্ছেদের জন্য মাত্র ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন।