বিশ্বভারতীর জয়েন্ট রেজিস্ট্রার এবং এস্টেট অফিসারকে চিঠি দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। — ফাইল ছবি।
বাবার নামে থাকা জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। বিশ্বভারতীর জয়েন্ট রেজিস্ট্রার এবং এস্টেট অফিসারকে চিঠি দিয়ে আরও এক বার জানালেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। সম্প্রতি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, বুধবার শুনানির মাধ্যমে অমর্ত্যের বাড়ি ও জমির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে। তার পরেই ওই চিঠি দিয়েছেন অমর্ত্য। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, শান্তিনিকেতনে তাঁর বাসভবন প্রতীচী নিয়ে বিশ্বভারতীর কিছু অংশ বিবৃতি জারি করেছেন। তা দেখেই ওই চিঠি লিখছেন তিনি।
শান্তিনিকেতনে অমর্ত্যের বাড়ি এবং জমি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই নিয়ে তৈরি হয়েছে বিবাদ। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য এখন বিদেশে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমি দখল করতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকেই চিঠি অমর্ত্যের। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘১৯৪৩ সাল থেকে শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ আমার পরিবার এবং আমরা নিয়মিত ব্যবহার করছি। আমি এই জমির মালিক। আমার বাবা আশুতোষ সেন এবং মা অমৃতা সেনের মৃত্যুর পর বাড়ির মালিকানা আমার কাছে এসেছে। লিজ নেওয়া এই জমি লাগোয়া আরও কিছু জমি কিনেছিলেন তাঁরা।’’
চিঠিতে অমর্ত্য এ-ও লিখেছেন, ‘‘গত ৮০ বছর ধরে জমির ব্যবহার একই রকম ভাবে রয়ে গিয়েছে। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই জমি নিয়ে বিরুদ্ধ কোনও দাবি যুক্তিগ্রাহ্য নয়। বোলপুরের ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন জমি নিয়ে বর্তমান ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং এই নিয়ে কোনও হস্তক্ষেপ বা শান্তিভঙ্গের চেষ্টা করা উচিত নয়।’’ অমর্ত্য চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি আগামী জুন মাসে শান্তিনিকেতনে ফিরবেন। তখন জমি নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রইল বলেই মনে করছেন একাংশ।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, ১৯ এপ্রিল বেলা ১২টায় বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবনে শুনানি হবে। সেখানেই অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্কের নিষ্পত্তি করা হবে। ১৮ এপ্রিল, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ই-মেল মারফত অমর্ত্যের প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকার কথা জানাতে হবে। বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি জেলা পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং শান্তিনিকেতন থানাকে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বভারতীর অভিযোগ, ‘প্রতীচী’র চারপাশে ১৩ ডেসিমেল জমি নোবেলজয়ী বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছেন। তারা জানিয়েছে, ১৯৪৩ সালে অমর্ত্যের বাবা আশুতোষকে কখনওই ১.৩৮ একর জমি লিজ দেওয়া হয়নি। ১.২৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতে বিশ্বভারতী অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ১৩ ডেসিমেল জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। সেই জমি ফেরত দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনের একাংশের মতে, জমি অর্থনীতিবিদের নামে ‘মিউটেশন’ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বভারতীর সমস্ত অভিযোগ ‘অর্থহীন’। অমর্ত্যের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী জানান, তাঁর মক্কেল জুনে শান্তিনিকেতনে ফিরে এলে জমি মাপজোকে অথবা বিশ্বভারতীর শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে চান।