হাওড়া- শিয়ালদহে বাতিল বহু ট্রেন, ভোগান্তি চরমে

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় রাজ্যজুড়ে লাগাতার বিক্ষোভের জেরে গত দু’দিন ধরে হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন চলাচল কার্যত বন্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৮
Share:

বাতিল একের পর এক ট্রেন। শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। —ছবি রণজিৎ নন্দী।

পরপর দু’দিন দু’টি স্টেশনে গিয়েও ট্রেন বাতিল হওয়ায় ফিরে আসতে হল গার্ডেনরিচের বাসিন্দা শম্ভু ঘোষকে। প্রথম দিন হাওড়া স্টেশন। দ্বিতীয় দিন শিয়ালদহ স্টেশন। ট্রেন বাতিল হওয়ায় শম্ভুবাবুর মতো নাজেহাল হলেন বহু যাত্রীই।

Advertisement

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় রাজ্যজুড়ে লাগাতার বিক্ষোভের জেরে গত দু’দিন ধরে হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন চলাচল কার্যত বন্ধ। শনিবার কিছু ট্রেন চললেও রবিবার সমস্ত ট্রেনই বাতিল করা হয়। যার জেরে তীব্র হেনস্থার শিকার হতে হল হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনের যাত্রীদের।

পেশায় সেনাবাহিনীর কর্মী শম্ভু ঘোষ ছুটি কাটাতে সপরিবারে গার্ডেনরিচের বাড়ি এসেছিলেন। শনিবার তাঁর কামরূপ এক্সপ্রেসে কর্মস্থল শিলিগুড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার কামরূপ এক্সপ্রেস বন্ধ থাকায় রবিবার শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ট্রেনের তৎকালের টিকিট কাটেন। কিন্তু এ দিনও ওই ট্রেন বাতিল হওয়ায় চূড়ান্ত হয়রানির মুখে পড়তে হয় শম্ভুবাবুকে। রবিবার শিয়ালদহ স্টেশনে স্ত্রী, দুই শিশুকন্যা-সহ ভারী মালপত্র নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন শম্ভুবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘অফিসের ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছে। শনিবার ট্রেন বাতিল হওয়ায় তড়িঘড়ি রবিবারের তৎকালের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু এ দিনও ট্রেন বাতিল হওয়ায় এ বার অফিসকে কী বলব বুঝতে পারছি না।’’ বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে আবদুল আলিম তিন বন্ধুকে নিয়ে দিন দুয়েক আগে কলকাতায় এসেছেন। রবিবার রাতে হাটেবাজারে এক্সপ্রেসে তাঁর উত্তরবঙ্গ বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন বাতিল হওয়ায় সমস্যায় পড়েন আলিমসাহেব। তিনি বলেন, ‘‘একটা পরিকল্পনা করে এসেছিলাম। কিন্তু সবই ভেস্তে গেল।’’

Advertisement

আবার অসমের গুয়াহাটির বাসিন্দা সন্দীপ বসু সপরিবারে দিন সাতেক আগে কলকাতা বেড়াতে এসেছিলেন। রবিবারই তাঁদের গুয়াহাটি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন বাতিল হওয়ায় চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন তাঁরা। ১৬ জন সদস্য নিয়ে তাঁরা কলকাতায় এসেছেন।

সন্দীপবাবু বললেন, ‘‘মালপত্র সব গুছিয়ে বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু ফের হোটেলে ফিরে যেতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে। আর্থিক সমস্যা তো রয়েছেই। পাশাপাশি আমরা সবাই চাকরি করি। সবার ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছে। ভীষণ সমস্যার মুখে পড়েছি।’’ রায়গঞ্জ থেকে কুড়ি জনের দল দিন দুয়েক আগে কলকাতায় এসেছে। রবিবার রাতের ট্রেনে তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ট্রেন বাতিল হওয়ায় তাঁরাও ফের হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন।

একই ভাবে হাওড়া থেকে রবিবার কামরূপ, সরাইঘাট, আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার, মালদহ টাউন ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস বাতিল হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। কামরূপ এক্সপ্রেসে অসম বেড়াতে যেতে এ দিন সপরিবারে হাজির ছিলেন যাদবপুরের বাসিন্দা মানস চক্রবর্তী। কিন্তু ট্রেন বাতিল হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় মানসবাবুদের। প্রায় ছ’ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন তাঁরা। একটি জরুরি কাজে মালদহ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন হাওড়ার সালকিয়ার রমেন্দ্র পাঠক। ট্রেন বাতিল হওয়ায় তাঁকেও দুর্ভোগে পড়তে হল।

রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে একের পর এক উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন বাতিল হওয়ায় চরম সমস্যার মুখে পড়তে হয় যাত্রীদের। স্টেশনের তরফে ঘোষণা করে বাতিল হওয়া ট্রেনের যাত্রীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে টিকিট বাতিল করে টাকা ফেরত নিয়ে নিতে বলা হয়। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই শিয়ালদহ স্টেশনে টিকিট বাতিল করতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ দিকে হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশনে সমস্ত ট্রেন বাতিল হওয়ায় ধর্মতলা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসে ভিড় উপচে পড়েছিল। ধর্মতলার বাসস্ট্যান্ডে লাইন দিয়ে টিকিট কিনতে দেখা যায় যাত্রীদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement