সেবা দিয়েও অমানবিকতার শিকার বহু অসুস্থ ডাক্তারই

অস্থিমজ্জা ও রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত ইএনটি সার্জন নিখিলবাবুর কেমোথেরাপির জন্য ৩৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। আর্থিক সামর্থ্য না-থাকায় চিকিৎসার খরচ জোগাতে অবসরকালীন প্রাপ্য অর্থটুকুই ভরসা ছিল চিকিৎসক পরিবারের।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৮
Share:

তখন হাসপাতালে নিখিলবাবু। ফাইল চিত্র

গুরুতর অসুখের জন্য স্বেচ্ছাবসর নেওয়া সরকারি চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা আর কত শোচনীয় হলে দিনবদলের সূচনা হবে? মালদহ মেডিক্যাল কলেজের প্রবীণ চিকিৎসক নিখিলচন্দ্র রায়ের (৬২) মর্মান্তিক পরিণতির পরে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন এই প্রশ্নেই সরব হয়েছে।

Advertisement

অস্থিমজ্জা ও রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত ইএনটি সার্জন নিখিলবাবুর কেমোথেরাপির জন্য ৩৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। আর্থিক সামর্থ্য না-থাকায় চিকিৎসার খরচ জোগাতে অবসরকালীন প্রাপ্য অর্থটুকুই ভরসা ছিল চিকিৎসক পরিবারের। মৃতের স্ত্রী অণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় রায়ের অভিযোগ, তাঁরা সময়মতো চিকিৎসকের সার্ভিস বুক-সহ যাবতীয় নথি জমা দেন। কিন্তু মালদহ মেডিক্যালের সুপারের অফিসের অফিসারদের গাফিলতিতে আবেদনের সাড়ে ৫ মাস পরেও তাঁরা প্রাপ্য অর্থ পাননি। বৃহস্পতিবার সুবিচার চেয়ে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের কাছে ই-মেলে অভিযোগ করেছেন মৃতের চিকিৎসক-পুত্র অর্ণব রায়।

এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। স্বাস্থ্য ভবন গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড লিভারের ক্যানসারে আক্রান্ত মনোরোগ চিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিতে বহাল থাকার উপযোগী নন বলে জানানোর পরেও তাঁর স্বেচ্ছাবসর মঞ্জুর হয়নি। ২৩ এপ্রিল গৌতমবাবু মারা যান। দু’মাসের ব্যবধানে ফের এক সরকারি চিকিৎসকের স্বেচ্ছাবসর নিয়ে অমানবিক আচরণের অভিযোগ ওঠে স্বাস্থ্য ভবনের বিরুদ্ধে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক কাঞ্চন মণ্ডলকে বোর্ড যে-দিন ছাড়পত্র দেয়, সেই দিনেই মৃত্যু হয় তাঁর!

Advertisement

আশা ছিল, সাধারণ মানুষের পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর সরকারি চিকিৎসকদের হয়রানির ঘটনায় ছেদ পড়বে। কিন্তু হেনস্থার পুনরাবৃত্তি হয় জুলাইয়ে। মালদহ মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক কল্যাণ দে সরকারের (ক্যানসারে আক্রান্ত) অভিযোগ ছিল, মেডিক্যাল বোর্ড অহেতুক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একাধিক পরীক্ষা করতে বলায় তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এমআর বাঙুরের রেডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক আশিস চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতা প্রায় একই রকম বলে জানায়

অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টরস (এএইচএসডি)। স্বেচ্ছাবসরের জন্য অগস্টে স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন করেন ক্যানসারে আক্রান্ত ওই চিকিৎসক। এখনও স্বেচ্ছাবসর পাননি তিনি। এএইচএসডি-র জেনারেল সেক্রেটারি মানস গুমটা বলেন, ‘‘যত দূর জানি, গৌতমবাবু, কাঞ্চনবাবুর পরিবার এখনও প্রাপ্য বকেয়া পাননি। এই ধরনের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর শেষ কোথায়?’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক কৌশিক চাকী বলেন, ‘‘মানবিকতা আমলাতন্ত্রের উপরে। চিকিৎসকেরা যাতে প্রাপ্য মর্যাদা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘অসুস্থতার জন্য নিখিলবাবুর দু’বছর অনিয়মিত ছুটি ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের কার্যালয় অগস্টে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছিল। পুজোর ছুটির পরে, ১৯ নভেম্বর আমরা প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করে এজি বেঙ্গলের অফিসে পাঠিয়েছিলাম। এর মধ্যে উনি মারা গেলেন। খুব দুঃখজনক ঘটনা। আরও দ্রুত নথি পাঠাতে পারলে ভাল হত। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।’’

আর মেডিক্যাল বোর্ডে হয়রানি?

অজয়বাবু বলেন, ‘‘গুরুতর অসুস্থ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে আমরা মেডিক্যাল বোর্ডকে নরম হতে বলেছি। বোর্ড ছাড়পত্র দিলে স্বাস্থ্য ভবন তা দ্রুত গ্রহণ করছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement