প্রতীকী ছবি।
যে-জাতি শংসাপত্রের ভিত্তিতে সংরক্ষণ-সহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তা প্রদানের ব্যবস্থা চালু আছে বহু বছর ধরে। তা সত্ত্বেও চলতি ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে, জাতি শংসাপত্র চেয়ে প্রথম প্রজন্মের (যাঁদের পরিবারে এর আগে কোনও জাতি শংসাপত্র বা অনুরূপ প্রমাণ ছিল না) প্রচুর আবেদন আসছে। প্রশাসনের অনেকের কাছেই এটা বিস্ময়কর ঠেকছে। তাই এ বার জেলায় জেলায় জাতি শংসাপত্র প্রদান পদ্ধতির উপরে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকে। ঠিক হয়েছে, অফিসারদের পৃথক দল গড়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে, পরিচয় যাচাই করে তবেই ওই শংসাপত্র দেওয়া হবে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১ থেকে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির থেকে প্রায় ৫৭ হাজার জাতি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও ৩০ হাজার শংসাপত্র দেওয়া যাবে বলে সরকারের আশা। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রথম প্রজন্মের আবেদন জমা পড়েছে কমবেশি ১৫ হাজার। অভিজ্ঞ অনেক আধিকারিকের বক্তব্য, বহু বছর ধরে জাতি শংসাপত্র দেওয়ার কাজ চলা সত্ত্বেও এত সংখ্যক মানুষের পরিবারের কারও কোনও জাতি শংসাপত্রের প্রমাণ না-থাকাটাই বিস্ময়ের। তাই প্রথম প্রজন্মের এত আবেদনকারীর বিষয়ে নিবিড় অনুসন্ধান জরুরি। তার জন্য জেলায় জেলায় আধিকারিকদের বিশেষ দল গড়া হচ্ছে। আবেদনকারীদের দাবি যাচাই করবে সেই সব দলই। পাশাপাশি, জেলায় জেলায় চলতি পদ্ধতির উপরে নজরদারি চালাবে রাজ্য স্তরের অফিসারদের অন্য দল।
‘‘আবেদনপত্র যে-হারে আসছে, তাতে মনে হচ্ছে, এ মাসেই সংখ্যাটা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। রোজ ৫০-৬০ হাজার আবেদন জমা পড়ছে। এ বার প্রথম প্রজন্মের আবেদনকারীদের দাবি যাচাই করবে অফিসারদের বিশেষ দল। এমনিতে তফসিলি জনজাতিদের ক্ষেত্রে এই আবেদনের সংখ্যা খুবই কম হওয়ার কথা। তবে তফসিলি জাতি বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্তদের ক্ষেত্রে প্রথম প্রজন্মের আবেদন থাকতে পারে। সোম-মঙ্গলবার আবেদনপত্র যাচাই শুরু হবে” বলেন এক প্রশাসনিক কর্তা।
জাতি শংসাপত্রের আবেদনকারীর পরিবারে কোনও নথি না-থাকলে সরকারের অনুসন্ধানের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি চালু আছে দীর্ঘদিন ধরেই। বিভিন্ন জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, সে-ক্ষেত্রে আবেদনকারী যেখানে বসবাস করেন, সেখানকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। অন্তত পাঁচ জন বা তার বেশি প্রবীণ এলাকাবাসী আবেদনকারীকে সংরক্ষিত শ্রেণিভুক্ত বলে জানিয়ে দিলে শংসাপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। যে-সব বাসিন্দা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তাঁদের পরিচয়ের-নথিপত্রও সংগ্রহ করতে হয় প্রশাসনকে। “এমন কয়েকটি পদবি আছে, যেগুলি সাধারণ শ্রেণির হতে পারে, আবার সংরক্ষিত তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এলাকার প্রবীণেরা (একই পদবি বা শ্রেণির হোন বা না-হোন) আবেদনকারীকে চিহ্নিত করতে পারেন। তাতে প্রশাসনের অনুসন্ধানে সুবিধা হয়,” বলেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তা।
নভেম্বরে রাজ্য ঘোষণা করেছিল, জাতি শংসাপত্র পেতে আগে অনেক সময় লাগত। জন্মসূত্রেই মানুষ তফসিলি জাতি, জনজাতি বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত (ওবিসি) হন। তাই বাবা-মায়ের এক জনের প্রামাণ্য নথি থাকলেই শংসাপত্র পাওয়া যাবে। যাঁদের কাছে এমন কিছু নেই, তাঁরা প্রথম প্রজন্মের জাতি শংসাপত্র চাইলে অনুসন্ধানের পরে তা দেওয়া হবে। সে-ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনে পঞ্চাশের দশকের নথিপত্র জমা দিতে হবে না। তবে উপভোক্তাকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতেই হবে।