প্রতীকী ছবি।
কিছু বিষয়ের পরীক্ষা ছাড়াই এ বার আইসিএসই এবং আইএসসি-র ফল বেরোনোয় অনেক পরীক্ষার্থী মনে করছেন, সুবিচার হল না। যদি করোনা পরিস্থিতি না-হত, যদি তাঁরা সব পরীক্ষা দিতে পারতেন, তা হলে হয়তো আর একটু বেশি নম্বর পেতেন। কোনও কোনও পরীক্ষার্থী জানাচ্ছেন, যে-তিনটি বিষয়ে তাঁরা বেশি নম্বর পেয়েছেন, সেগুলিতে রিভিউয়ের আবেদন করবেন। তাঁরা মনে করছেন, ওই তিনটি বিষয়ে নম্বর একটু বাড়লে পরীক্ষার সামগ্রিক মূল্যায়নেই নম্বরের হার বেড়ে যাবে।
লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজের ছাত্র অনয় বেদ আইসিএসই পরীক্ষায় পেয়েছে ৯৮.৪%। তার মা নীনা বেদ বলেন, “ছেলে খুব ভাল নম্বর পেয়েছে। আমরা খুব খুশি। কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে, পুরো পরীক্ষা হলে হয়তো আর একটু বেশি নম্বর পেত। ওর চারটি পরীক্ষা বাকি ছিল। যেগুলো দিতে পারল না। যে-ভাবে খেটেখুটে পড়াশোনা করেছে, তাতে ৯৯% নম্বর পেতে পারত।”
পার্ক সার্কাসের ডন বস্কো স্কুলের অধ্যক্ষ ফাদার বিকাশ মণ্ডলের মতে, “যাদের প্রস্তুতি খুব ভাল হয়েছিল, এই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করায় তারা কিছুটা হলেও হতাশ। তাদের অনেকে মনে করছে, পুরো পরীক্ষা দিতে পারলে আর একটু বেশি নম্বর পেত।” ফাদার বিকাশ জানান, তাঁদের স্কুলে আইসিএসই-তে সর্বাধিক ৯৯% এবং আইএসসি-তে ৯৮.৭৫% নম্বর উঠেছে। পরীক্ষার্থীদের কেউ কেউ জানাচ্ছে, দুই বা তিন নম্বর বাড়লেও শতাংশের হেরফের হত। আইএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজে ভর্তি হতে একটু বেশি সুবিধা হত।
হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সপ্রু জানান, তাঁদের স্কুলে মোটের উপরে ফল খুব ভাল হয়েছে। আইসিএসই-তে সর্বাধিক নম্বর উঠেছে ৯৯.৪%। সীমাদেবী বলেন, “আইসিএসই, আইএসসি পরীক্ষার্থীরা মূল্যায়নে খুশি। যে-সব বিষয়ে তারা পরীক্ষা দিতে পারেনি, সেগুলোয় ভাল নম্বরই পেয়েছে।” একই বক্তব্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের অধ্যক্ষ রঞ্জন মিত্রের। “এই ভাবে মূল্যায়ন করা ছাড়া আর তো কোনও বিকল্প উপায় ছিল না। পরীক্ষার্থীরা মোটের উপরে খুশি,” বলেন রঞ্জনবাবু।
তবে কয়েকটি স্কুলের অধ্যক্ষেরা জানান, কোনও কোনও পরীক্ষার্থী রিভিউ করার কথাও ভাবছেন। বিশেষ করে যাঁরা এ বার আইএসসি পরীক্ষা দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকে মূলত যে-তিনটি বিষয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন, সেগুলিতেই রিভিউয়ের আবেদন করছেন। কারণ, ওই তিনটি বিষয়ের কোনও একটিতে নম্বর বাড়লে তার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক মূল্যায়নে।
এ বার মেধা-তালিকা দেওয়া হয়নি। সেই জন্যও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কিছু পরীক্ষার্থী। তাঁদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, অনেকে এক থেকে দশের মধ্যে থাকার লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁদের অনেকের আশাভঙ্গ হল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন, আইসিএসই ও আইএসসি মূল্যায়নে কি লেখা থাকবে যে, করোনা পরিস্থিতির জন্য এ বার বিশেষ ধরনের মূল্যায়ন হল? তাঁদের যে অতিমারির আবহে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, কয়েক বছর বাদে অনেকে সেটা ভুলে যেতে পারেন। ফলে মেধা-তালিকায় যাঁদের এক থেকে দশ বা এক থেকে কুড়ির মধ্যে থাকার লক্ষ্য ছিল, তাঁদের আফসোস কোনও দিন যাবে না। মেধা-তালিকা ঘোষণা না-করায় তাঁরা সুবিচার পেলেন না। তাঁদের অভিভাবকেরাও হতাশ।