ফাইল চিত্র।
সব বিষয়ে পরীক্ষা না-হোক, ঢালাও নম্বরের খবরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গিয়েছিল শুক্রবার। এক দিনের ব্যবধানে দুর্ভাবনা ঘিরে ধরেছে উচ্চ মাধ্যমিকের অনেক পরীক্ষার্থীকেই। তার মূলে আছে ফল-বিভ্রাট।
৩১ জুলাইয়ের আগে হাতে মার্কশিট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন ভরসা সাইবার-সরণি। কিন্তু সেই অনলাইনে নম্বর দেখতে গিয়ে কেউ কেউ দেখছেন, নম্বরের জায়গাটা বেবাক ফাঁকা! কারও কারও ক্ষেত্রে একই বিষয়ের নম্বর একাধিক বার দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষিত বিষয়গুলির মধ্যে যেটিতে সর্বাধিক নম্বর উঠেছে, এ বারের নিয়মে অপরীক্ষিত বিষয়ে তারই ভিত্তিতে নম্বর পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেকের অভিযোগ, তাঁদের অপরীক্ষিত বিষয়ে অন্য নম্বর দেখাচ্ছে অনলাইন। এই অবস্থায় অনলাইনে এখন যে-নম্বর দেখা যাচ্ছে, সেটাই চূড়ান্ত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে অনেক পরীক্ষার্থীর মনে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ ফল প্রকাশ করেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস। তার পরে পরীক্ষার্থীরা অনলাইনে ফল দেখতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। সার্ভার-সমস্যায় বেশ কিছু ক্ষণ ফল দেখা যায়নি। কিছু ফল অসম্পূর্ণ দেখাচ্ছিল। সার্ভার বদলের কিছু ক্ষণ পরে সমস্যা মিটলেও বেশ কিছু ফলে বিভ্রাট থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: জুতো সেলাই থেকে সফল পাঠ, উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ পেল হরিশ্চন্দ্রপুরের সঞ্জয়
যেমন, পূর্ব বর্ধমানের একটি স্কুলের এক পরীক্ষার্থী শনিবার দেখেন, তাঁর কোনও নম্বরই আসেনি! পুরোটাই ফাঁকা। ওই ছাত্র বলেন, ‘‘বার বার ওয়েবসাইট খুলেছি। কিন্তু আমার নম্বরের জায়গাটা শূন্য!’’
করোনার প্রাদুর্ভাবে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে শেষ তিন দিনে অন্তত ১৪টি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। অতিমারির সময়ে মূল্যায়নের নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি অঙ্ক পরীক্ষায় ১০০ পান, তা হলে পরীক্ষা দিতে না-পারা বিষয়ে তিনি ১০০-ই পাবেন। কিন্তু অনলাইনে কেউ কেউ দেখছেন, সেই নিয়ম মানা হয়নি। এক ছাত্রী জানাচ্ছেন, তিনি যে-সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পেরেছিলেন, তার মধ্যে একটিতে বেশ ভাল নম্বর উঠেছে। কিন্তু অনলাইন দেখাচ্ছে, তাঁর পরীক্ষা না-দেওয়া বিষয়গুলির মধ্যে একটিতে নিয়ম মেনে সেই নম্বর দেওয়া হলেও অপরীক্ষিত অন্য বিষয়ে তা দেওয়া হয়নি। ওই পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন, ‘‘এটা হবে কেন? কেন শনিবার সারা দিনেও আমার নম্বর ঠিক করে দেওয়া হবে না?’’ আবার কোনও কোনও পরীক্ষার্থী জানাচ্ছেন, তাঁর একই বিষয়ের নম্বর এসেছে একাধিক বার। কিছু পড়ুয়া অবশ্য জানান, প্রথমে ভুল বা বিভ্রান্তিকর নম্বর এলেও পরে ‘আপডেট’ করে তা ঠিক করে দিয়েছে সংসদ। কিন্তু শনিবারেও অনেকের ফল-বিভ্রাট থেকেই গিয়েছে।
সংসদ জানিয়েছে, অনলাইনে দেখানো নম্বর নিয়ে সংশয় থাকলে বা ফল সংক্রান্ত অন্য কোনও প্রশ্ন থাকলে তার সমাধানের জন্য আজ, সোমবার থেকে একটি হেল্পলাইন (নম্বর: ৯৮৫১৯০৫৫২৯) চালু থাকছে। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে কি না অথবা যে-সব নম্বর ফাঁকা এসেছে বা নম্বর-বিভ্রাট হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর সুষ্ঠু সমাধান হবে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় রয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীর। এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সংসদের সভানেত্রী ফোন তোলেননি, মেসেজেরও উত্তর দেননি।
নম্বর-বিভ্রাট নিয়ে সরব হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন। দুই শিক্ষক নেতা অনিমেষ হালদার ও সৌদীপ্ত দাসের মতে, করোনা আবহে এখনই তো ক্লাস শুরু হচ্ছে না। তাই আরও সতর্ক হয়ে অনলাইনে ফল প্রকাশ করতে পারত সংসদ। অনলাইনে বিভ্রান্তিকর নম্বর যাঁরা পেলেন, তাঁদের উদ্বেগ দূর করতে সংসদের তরফে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ওই শিক্ষক-নেতারা।