নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
কোথাও পুলিশ, কোথাও সরকারি আমলার ‘আপৎকালীন দফতর’ বা ক্যাম্প অফিস। কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার খোদ বনকর্তার ফিল্ড অফিস — উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্য বন দফতরের শতাধিক বনবাংলোর বেশ কয়েকটি এখন পর্যটক নয়, ‘দখল’ নিয়েছেন পদস্থ সরকারি কর্তারাই।
বন দফতর সূত্রের দাবি, বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলো ছাড়ার প্রশ্নে কোনও সাড়াই মিলছে না সরকারি ওই কর্তাদের কাছে। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘জঙ্গলের নীরবতা ভেঙে ওই বাংলোগুলি এখন কাছারি ঘরের চেহারা নিয়েছে!’’
সরকারের শীর্ষ কর্তা হলেও, বন বাংলোয় ঠাঁই নিলে তাঁদের নিয়ম মাফিক ‘অ্যাকোমডেশন চার্জ’ বা মূল্য গুনে দেওয়াই দস্তুর। এমনকি বনকর্তারাও বাংলোয় রাত্রি যাপন করলে দফতরের নিয়মানুসারে তাঁদের নির্দিষ্ট ঘর-ভাড়া বা ‘রুম রেন্ট’ দেওয়া রীতি রয়েছে। কিন্তু বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার অভিযোগ, ভাড়া দেওয়া দূরস্থান বরং অনেক সময়েই ‘দখল’ নেওয়া আমলাদের দেখভালের দায়, তাঁদের ‘খানাপিনা’র ব্যবস্থার দায়ভারও নিতে হচ্ছে বন দফতরকে। এর ফলে, নিখাদ পক্ষীপ্রেমী (বার্ড ওয়াচার) কিংবা প্রাণী সংরক্ষণের তথ্য সংগ্রহে বনে-জঙ্গলে নিত্য যাতায়াত করা অরণ্যপ্রেমীরা সহজে ওই সব বাংলো বুকিং পাচ্ছেন না।
বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বনবাংলো সাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার তেমন রেওয়াজ নেই। আম-পর্যটকের হট্টগোলে বনেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু বাস্তবিকই যাঁরা অরণ্যপ্রেমী, এখন তাঁদেরও বুকিং দেওয়া যাচ্ছে না।’’
বন দফতরের খবর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় দফতরের অন্তত গোটা দশেক বাংলো এ ভাবেই বিভিন্ন অজুহাতে সরকারি ‘অধিকৃত’। কোথাও দেউচা-পাঁচামির খনি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে প্রতিরোধ ঠেকাতে পুলিশ কর্তাদের রাত্রি যাপনের জন্য প্রায় পাকাপাকি ভাবে ‘দখল’ করা হয়েছে বনবাংলো। কোথাও বা ট্রেনিংয়ে আসা কোনও পুলিশ কর্তা বনবাংলোর ঘর দখল করে রেখেছেন।
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে কয়েকটি বনবাংলো ‘পুলিশি দখলদারি’-র পাশাপাশি অন্য এক সরকারি দফতর তাদের ক্যাম্প অফিস হিসেবে বেশ কিছু মাস ধরে ব্যবহার করে চলেছে বাংলো। পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং বাঁকুড়ার অন্তত চারটি বনবাংলোয় তো রীতিমতো দফতর খুলে বসেছেন খোদ বনকর্তারাই। বাংলোর অদূরে জনবসত এলাকায় তাঁদের দফতর এবং বাসস্থান (যা প্রায় বনবাংলোর মতোই সজ্জিত) থাকা সত্ত্বেও ফিল্ড অফিস হিসেবে তাঁরা ওই বনবাংলোগুলিই ব্যবহার করে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতর এবং রাজ্য পুলিশের কাছেও বাংলো খালি করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসেই বনবাংলোগুলির ‘অবস্থা’ সম্পর্কে (স্ট্যাটাস অ্যান্ড কন্ডিশন) চাওয়া হয়েছে বন দফতরের কাছে।