প্রতীকী ছবি।
জমি একটি। কিন্তু তা দেখিয়ে অনেকে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের সুবিধে নিচ্ছেন—এমন অভিযোগ পেয়ে নড়ে বসেছে বাঁকুড়া জেলা কৃষি দফতর। কী ভাবে তা রোখা যায়, সে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘ভুয়ো উপভোক্তাদের বাছাই করা দরকার। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শীঘ্রই করা হবে।”
নিয়ম অনুযায়ী, জমির মালিক হলে পরচা দেখিয়ে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের সুবিধে পাওয়া যায়। ন্যূনতম চাষযোগ্য জমি থাকলে, বছরে দু’দফায় চার হাজার টাকা এবং এক একর বা তার বেশি চাষযোগ্য জমি হলে, বছরে দু’দফায় ১০ হাজার টাকা উপভোক্তাদের দেওয়া হয় চাষের কাজে খরচ করতে। জেলার এক কৃষি অধিকর্তা জানান, নিজের নামে থাকা জমির পরচা দেখিয়ে বাঁকুড়ায় প্রায় তিন লক্ষ চাষি ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের উপভোক্তা হয়েছেন। তাঁরা টাকাও পাচ্ছেন। কিন্তু উপভোক্তাদের একাংশ ‘দানপত্র’ করে সে জমি সন্তানদের নামে লিখে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে, জমির নতুন পরচা করিয়ে তাঁদের সন্তানেরাও এখন ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের জন্য নাম লিখিয়েছেন। সরকারের চোখে ‘ধুলো দিয়ে’ টাকা পাওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, রক্তের সম্পর্কের কাউকে জমি ‘দানপত্র’ করে দেওয়া হলে, ‘রেজিস্ট্রেশন’ খরচ অনেকটা কমে যায়। তাই সে ভাবে জমির মালিকানা বদল লাভজনক। পক্ষান্তরে, এক বার ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের উপভোক্তা হলে, প্রতি বছর নাম নবীকরণের প্রয়োজন নেই। বছরের পরে বছর সে সুবিধে পাওয়া যায়। কৃষি দফতরের কাছে জমির রেকর্ড থাকে না। ফলে, প্রতিবিধানের সহজ রাস্তা নেই।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক জেলা আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘কোন জমির মালিক কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধে পাচ্ছেন, সে তথ্য আমাদের কাছে থাকে না। থাকলে, ব্যাপারটা ধরা পড়ত।’’ বাঁকুড়ার উপকৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “একই জমির ভিত্তিতে একাধিক ব্যক্তি কৃষকবন্ধু প্রকল্পের উপভোক্তা হয়েছেন বলে ব্লক থেকে অভিযোগ এসেছে। পদক্ষেপ করার জন্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছি।” কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘জমির মাপের উপরে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকার অঙ্ক ধার্য হয়। জমির মালিক যদি জমির কিছুটা অংশ নিজের নামে রাখেন, তবে তিনি সেই মাপের অনুপাতে টাকা পাবেন। কিন্তু পুরো জমি দান করলে, প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য থাকবেন না। বিষয়টা দেখছি।’’