প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে হিমঘরগুলিতে আলু রাখার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে সোমবার। দু’তিন দিন পরেও হিমঘর ফাঁকা না হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যেই ‘ওয়েস্টবেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন’ আলু বার করার জন্য আরও ১৫ দিন সময় চেয়ে খাদ্য ভবনে চিঠি দিয়েছে। যদিও রাজ্য সরকার সময়সীমা বাড়াতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার কলকাতায় বৈঠকে বসার কথা আলু ব্যবসায়ীদের।
রাজ্যে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে ৪৬২টি হিমঘর রয়েছে। সেগুলি থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বা চাষিরা এখনও সব আলু বার করে নিয়ে যাননি। রাজ্যের আলু উৎপাদক জেলা হিসেবে পরিচিত বর্ধমান, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের হিমঘর মালিকেরা জানান, ২৭ নভেম্বর রাজ্য সরকার নির্দেশিকা দিয়ে সোমবারের মধ্যে সব আলু বার করতে বলে। তখন সারা রাজ্যে এক কোটি ৩০ লক্ষ বস্তা (৫০ কেজি প্রতি বস্তা) আলু ছিল। যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টন। এখন প্রায় এক কোটি বস্তা আলু হিমঘরে রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব নয়। কড়া হুঁশিয়ারি দিতেই পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। হিমঘর থেকে আলু বার করার জন্য আরও দু’তিন দিন আমরা দেখব। তার পরে আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’’
কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের অনেকের ধারণা, আলুর বাজারে চাহিদা-জোগানের ফারাক রাখার জন্য হিমঘর থেকে কম পরিমাণে আলু বার করা হচ্ছিল, এখন তা বোঝা যাচ্ছে। সে কারণেই এত দিন ধরে রাজ্যে ক্রেতাদের প্রায় ৪০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হয়েছে। আধিকারিকদের দাবি, আলু বার করার কড়া হুঁশিয়ারির পরেই পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। দু’এক দিনের মধ্যে খুচরো বাজারেও তার প্রভাব পড়বে।
রাজ্যের হিমঘর মালিক সংগঠনের সম্পাদক পতিতপাবন দে বলেন, ‘‘এখন হিমঘরগুলিতে কর্মী কম থাকে। তা ছাড়া, এত কম সময়ের মধ্যে রাতারাতি আলুর বস্তা হিমঘরের বাইরে বার করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আগের বছরগুলির মতো এ বারও বাড়তি ১৫ দিন সময় চেয়ে নেওয়া হয়েছে।’’
হিমঘরের বাইরে রাখার মতো জায়গা (শেড) নেই। হিমঘর মালিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, খোলা জায়গায় আলু রাখা যাবে না। কারণ, শীত এসে গিয়েছে। হিম পড়ছে। রাজ্য আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাইরে রাখলে আলু নষ্ট হবে। বাড়তি আরও কয়েক দিন হিমঘরে রাখা হলে যদি আলুর মান ঠিক থাকে, তবে আমরা তারই পক্ষে।’’
রাজ্যে প্রতি মাসে পাঁচ লক্ষ টন আলু লাগে। ভিন্ রাজ্যে যায় প্রায় এক লক্ষ টন। লালুর দাবি, পাঁচ লক্ষ টন আলু হিমঘরে রয়েছে। নতুন আলু উঠতে দেরি আছে। অন্তর্বর্তী সময়ে রাজ্যের মানুষের জন্য ওই পরিমাণ আলু প্রয়োজন। তাঁর দাবি, “এখন জোর করে আলু বার করে দিলে কিছু দিন পরেই জোগানের অভাব হবে।’’